জাতীয় সরকার নির্বাচনের আগে না পরে?

জাতীয় সরকার নির্বাচনের আগে না পরে এই ইস্যু নিয়ে এখন বিএনপির প্রস্তাবিত বৃহত্তর জোটে জটিলতা চলছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে যে জাতীয় সরকার হবে বিএনপি জোট নির্বাচনের জয়ের পর।

অবশ্য এই জোটে যেতে আগ্রহী বিএনপির বন্ধু বলে পরিচিত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং তার অনুসারীরা জাতীয় সরকার চাইছেন নির্বাচনের আগে। আর সেই জাতীয় সরকারের অধীনে হবে নির্বাচন। সম্প্রতি ডা. চৌধুরী বলেছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার নয়, নির্বাচন হতে হবে জাতীয় সরকারের অধীনে। এর আগে তিনি দুই বছরের জন্য দেশে একটি জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলেছিলেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী এখন দেশের বাইরে আছেন। তিনি ফিরে এলে বিএনপির সাথে বৃহত্তর জোট গঠনে তার এই প্রস্তাব নিয়ে দর কষাকষি হবে বলে জানা গেছে। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অনুসারী ভাসানী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন,”আমরা বৃহত্তর জোট গঠনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতনের আন্দোলন শুরু করতে চাই। সরকারের পতনের পর আন্দোলনকারী ও গণতান্ত্রিক শক্তির সমন্বয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠন হবে। যার মেয়াদ হবে দুই-তিন বছর। এই সময়ে নির্বাচন প্রক্রিয়াসহ সব প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার শেষ করে ওই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে।”

বিএনপি যে নির্বাচনের পরে জাতীয় সরকারের কথা বলছে সে ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন,”এটা বিএনপির নিজস্ব রাজনৈতিক মতামত। আমাদের মধ্যে আলাপ আলোচনা হচ্ছে। জোটের আত্মপ্রকাশের আগেই আমরা সবাই মিলে রূপরেখা চূড়ান্ত করতে পারব বলে আশা করি।”

তিনি আরো জানান, আগামী সাত-আট দিনের মধ্যে তাদের এই রূপরেখার পক্ষের দলগুলোর একটি জোট আত্মপ্রকাশ করবে। এই জোট বিএনপির বৃহত্তর জোটের সাথে যুক্ত হয়ে যুগপৎ সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করবে।

বিএনপি জোটমুখী বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মনে করেন, এখন মূল লক্ষ্য হলো সরকারের পতন। নির্বাচনকালীন সরকার বা নির্বাচনের পরের সরকার কেমন হবে সেটা নিয়ে পরেও ভাবা যাবে। তিনি বলেন,”আমরা তো শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সরকার পতনের আন্দোলন করব না। এমপি, মন্ত্রী ভাগের জন্য আন্দোলন নয়। বিষয় হলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ফিরিয়ে আনা। তার জন্য যা যা করার করতে হবে। আর সেই পথে প্রধান বাধা বর্তমান সরকার। তাই সরকারকে আগে বিদায় করতে হবে।”

নাগরিক ঐক্যের প্রধান মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন,”এখন নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার এবং তার অধীনে নির্বাচন এই ইস্যুটি সামনে এনে জাফরুল্লাহ ভাই ঠিক করেননি। এর আগেও তিনি নানাভাবে কথাগুলো বলেছেন। এতে যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন বা যাদের আমরা পতন ঘটাতে চাই তারা সুযোগ পেয়ে যায়। বিএনপি একটি কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচন চাইছে। তারা অপেক্ষা করতে চাইছে না। এটা কোনো কাজের কথা নয়। কারণ এই ১১ বছরে যত প্রশাসনিক জঞ্জাল তৈরি হয়েছে সেটা দূর করতে হবে। করোনায় দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা বিপর্যস্ত। এখন একটু নতুন সরকার এলে সে একা সেটা সামলাতে পারবে না। এই বিষয়গুলো বুঝতে হবে। এটা ঠিক করতে এক বছর বা তার বেশিও লাগতে পারে ।”

তার কথা,”সরকারের রূপরেখা কী হবে, নির্বাচন কীভাবে হবে সেটা সরকারের পতনের পর প্রকাশ করা হবে। সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এরশাদও পাতনের আগে বলেছিল, রূপরেখা কী হবে। আমরা তখন বলিনি। বলেছি আগে তুমি বিদায় হও। এরশাদের পতনের পর রূপরেখা প্রকাশ করা হরেয়েছে। সেভাবেই নির্বাচন হয়েছে।”

নির্বাচনের আগে যে জাতীয় সরকারের কথা বলা হচ্ছে সেটা করা সম্ভব বলে মনে হয় না। আবার তারেক রহমান সাহেব লন্ডন থেকে নির্বাচনের পর জাতীয় সরকারের কথা বলা মানে বিএনপি এটা মিন করছে, বলেন মাহমদুদুর রহমান মান্না।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মঙ্গলাবার যে বার্তা পাঠিয়েছেন তাতে তিনি বলেন, তার দল নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। নির্বাচনের পর সব গণতান্ত্রিক শক্তি যারা আন্দোলনে থাকবে তাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।

এসএইচ-১৩/৩১/২২ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)