প্রশাসনে পদের অতিরিক্ত পদোন্নতির যেন ঢল চলছে!

প্রশাসনে পদের অতিরিক্ত পদোন্নতির যেন ঢল চলছে৷ তাই পদোন্নতি দেয়ার পরও কর্মকর্তাদের আগের পদেই রাখা হচ্ছে অথবা ওএসডি হয়ে পদায়নের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে৷

আর বাস্তব অবস্থা হচেছ তাদের যা পদবি সেই অনুযায়ী পদ সবাই কবে পাবেন তা নিশ্চিত নয়৷

বুধবার মোট ১৭৯ জন উপ সচিবকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হলেও তাদের রাখা হয়েছে আগের দায়িত্বেই ৷ আগে থেকেই যুগ্ম সচিব আছেন ৭১৩ জন৷ নতুন পদোন্নতি পাওয়াদের নিয়ে এখন যুগ্মসচিব হলেন ৮৯২ জন৷ কিন্তু যুগ্ম সচিবের জন্য অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৫০২টি৷ ফলে বিভিন্ন সময়ে যুগ্ম সচিব যারা হয়েছেন তাদের প্রায় অর্ধেকই হয় আগের পদে নয়তো উপসচিবের জন্য নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করছেন৷ আর একটি অংশ আছেন ওএসডি হয়ে৷

এই ঘটনা প্রশাসনে অনেক দিন ধরেই চলে আসছে৷ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, অতিরিক্ত সচিবের পদ আছে ৩৩৭টি৷ কিন্তু অতিরিক্ত সচিব আছেন ৪৩৩ জন৷ যুগ্ম সচিবের পদ আছে ৫০২টি৷ কিন্তু যুগ্ম সচিব আছেন ৮৯২ জন৷ এক হাজার উপসচিব পদের বিপরীতে আছেন এক হাজার ৬৩৬ জন৷ পদ আছে ৷ আর সিনিয়র সচিব ও সচিব আছেন ৭৬ জন৷ আরো ১৮ জন আছেন গ্রেড ওয়ান কর্মকর্তা৷ জন প্রশাসনে মোট পাঁচ হাজার ৯৭১ জন কর্মকর্তা আছেন৷

বাংলাদেশের চলতি বাজেটের শতকরা ২৫ ভাগই ব্যয় হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের বেতন-ভাতা, পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা দিতে৷ আর এই পদোন্নতির কারণে খরচ আরো বাড়ে৷ কিন্তু পদোন্নতির পর পদ না থাকায় তাদের কাছ থেকে কাঙ্খিত সেবা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই৷ তাহলে কেন এই পদবিহীন পদোন্নতি?

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন,”এভাবে পদোন্নতি দেয়া ঠিক নয়৷ এটা অনুচিত৷ পদের বিপরীতেই পদোন্নতি দেয়া উচিত৷ পদ ছাড়া পদোন্নতি দিয়ে সরকারের কী লাভ হয় জানি না৷ তবে সরকারে অকারণে আর্থিক ক্ষতি হয়৷ উঁচু পদে পদোন্নতি পেয়ে নিচের পদে কাজ করলে তাতে তো কোনো প্রশাসনিক লাভ নেই৷ ব্যক্তির লাভ হতে পারে৷”

আর জনপ্রশাসন গবেষক ও বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের(পিএটিসি) সাবেক রেক্টর এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার এটাকে “পেট মোটা” প্রশাসন বলে অভিহিত করেন৷ তার মতে, ” এটা আসলে প্রশাসনকে খুশি রাখার জন্য করা হচ্ছে৷ সরকার হয়তো কোনো কারণে তাদের খুশি রাখতে চায়৷ কিন্তু দুনিয়ায় এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশেও এমন উদাহরণ নেই৷ এর কারণে প্রথমে পদোন্নতি পেয়ে কর্মকর্তারা বাড়তি সুবিধা ও বেতন পেতে পারেন৷ কিন্তু পরে হতাশ হন৷ তাদের দক্ষতাও বাড়ে না৷ কারণ তারা নিচের পদেই কাজ করেন৷”

তিনি বলেন,”পদোন্নতির জন্য চাকরির বয়সের একটা হিসাব আছে৷ কিন্তু সেটা পদ থাকা সাপেক্ষে৷ আমি মনে করি পরীক্ষার মাধ্যমে পদের বিপরীতে পদোন্নতির বিধান করা দরকার৷ তাহলে দলে দলে এভাবে পদোন্নতি দিতে হবে না৷ কিন্তু সেটা এখন আর সম্ভব হবে বলে মনে হয় না৷ একবার একটা খারাপ সিস্টেম চালু হলে তা বাদ দেয়া কঠিন৷

পদ না থাকার পরও এই পদোন্নতিকে আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে দেখছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান৷ তিনি বলেন,”এই পদহীন পদোন্নতির ইতিবাচক দিক হলো যারা পদোন্নতি পান তারা বাড়তি বেতন ও সুবিধা পান৷ আর খারাপ দিক হলো প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, যোগ্য কর্মকর্তার অভাব সৃষ্টি হয়৷ যেখানে পাঁচ জন কর্মকর্তা প্রয়োজন সেখানে ১০ জন কাজ করে৷ এতে আসলে রাষ্ট্র ও দেশের সাধারণ মানুষের কোনো লাভ হয়না৷”

তার মতে,”সরকার এভাবে আনুগত্যের পুরস্কার দেয়৷ কিন্তু আনুগত্য হতে হবে রাষ্ট্র ও সংবিধানের প্রতি৷ কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি নয়৷ আর সেটা হতে হবে দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে৷”

এসএইচ-০৯/০৪/২২ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : ডয়চে ভেলে)