শিগগিরই হয়তো ধরা পড়বে ওসি মোয়াজ্জেম

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, একটা লোক পলাতক হলে তাকে অ্যারেস্ট করা কষ্টকরই হয়। তবে তাকে ( ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন) খুঁজে বের করার চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। শিগগিরই হয়তো ধরা পড়বে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সোমবার সচিবালয়ের মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক ইস্যুতে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন তিনি।

ওসিকে গ্রেফতার করতে না পারায় সরকারের কোনো ব্যর্থতা রয়েছে কি-না জানতে চাইলে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘অ্যারেস্ট, দেখুন একটা লোক পলাতক হলে তাকে অ্যারেস্ট করা কষ্টকরই হয়। তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে খুব সিরিয়াস।’

এটা রাজনৈতিক কোনো বিষয় কি না- এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, ‘পার্মানেন্টলি হারিয়ে যাওয়া পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা শেষ পর্যন্ত তো সে রকমভাবে থাকেনি। এটাও রাজনৈতিক কি না…আমার মনে হয় না… এ বিষয়টা নিয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে এবং প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে খুব সিরিয়াস। তিনি যেই হোক সোনাগাজী আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট এ মামলায় কারাগারে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের গাফিলতি কোনো প্রকার দুর্বলতা নেই।‘

মাদরাসাছাত্রী নুসরাত হত্যার বিষয়ে সরকারের কোনো দুর্বলতা নেই বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘সরকার প্রধান এ বিষয়ে খুব কঠোর। সুতরাং এ ব্যাপারে কারো ক্ষেত্রে শৈথিল্যের অবকাশ নেই। ওসি এখনো ধরা পড়েননি। হয়তো শুনবেন শিগগিরই ধরা পড়েছে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

এর আগে রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহানকে হত্যার জন্য ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন যতটুকু অপরাধ করেছে এজন্য তাকে শাস্তি পেতেই হবে।’

গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে পলাতক মোয়াজ্জেম হোসেন। পুলিশ বলছে, ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন পালিয়ে গেছেন। তবে ফেনী ও রংপুর দুই জায়গার পুলিশই গ্রেফতারি পরোয়ানা হাতে পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে।

পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘গ্রেফতারি পরোয়ানা রংপুরে এসেছে। কিন্তু মোয়াজ্জেম হোসেন অনুমতি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। পরোয়ানাটি সোনাগাজী থানার ওসির কাছে পাঠানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, (গ্রেফতারি পরোয়ানা) রংপুরে পাঠানোর ক্ষেত্রে বিধি অনুসরণ করা হয়নি। বিধি মোতাবেক কাজ করার জন্য তিনি ফেনীর পুলিশকে জানাবেন।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল গত ২৭ মে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ৩১ মে পরোয়ানার চিঠি ফেনীর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পৌঁছায়।

কিন্তু পুলিশ সুপার কাজী মনির-উজ-জামান চিঠি পাওয়ার বিষয়টি বারবার অস্বীকার করেন। একপর্যায়ে ৩ জুন রাতে পরোয়ানা হাতে পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। এর দুইদিন পর বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে পরোয়ানা রংপুর রেঞ্জে পাঠানো হয়। এখন আবার রংপুর রেঞ্জ বলছে, কাজটি বিধি মোতাবেক হয়নি।

মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহানকে গত ৬ এপ্রিল পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এর দিন দশেক আগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে সোনাগাজী থানায় যান নুসরাত। থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন সে সময় নুসরাতকে আপত্তিকর প্রশ্ন করে বিব্রত করেন এবং তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।

ওই ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে আদালতের নির্দেশে সেটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পিবিআই গত ২৭ মে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলে ওই দিনই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। পরোয়ানা জারির দুইদিন পর মোয়াজ্জেম হোসেন হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। আগামীকাল মঙ্গলবার আবেদনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

বিএ-১৫/১০-০৬ (ন্যাশনাল ডেস্ক)