করোনায় মৃতদের ৮০ শতাংশ টিকা নেওয়া ছিল না

সম্প্রতি করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৮০ শতাংশ করোনার টিকা নেওয়া ছিল না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

সোমবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে কোভিড-১৯ এর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আায়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, এই সময় করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৮০ শতাংশ করোনার টিকা নেননি। বাকি ২০ শতাংশ নানা ধরনের দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তবে এখনো কোনো ব্যক্তি ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কি না, সে তথ্য স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে নেই। জেনোম সিকোয়েন্সিং করতে ১৪-১৫ দিন সময় লাগে।

করোনা সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এসময় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সংক্রমণ বৃদ্ধি অশুভ ইঙ্গিত দিচ্ছে।

তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকায় ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। সে তুলনায় অন্যান্য বিভাগে কম। ফলে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সরকারি ১১ দফা নির্দেশনা মেনে না চললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

স্বাস্থ্যের ডিজি বলেন, দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ আগের তুলনায় বাড়লেও এখনো ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি। আইইডিসিআর (সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান) এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে করোনা আক্রান্ত রোগীদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং পরীক্ষায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীই ৮০ শতাংশ।

স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক বলেন, এখন যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের অধিকাংশই টিকা নেননি। এছাড়া কো-মরবিডিটির (ক্যান্সার, হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপজনিত) কারণেও মারা যাচ্ছে। দেশে এ পর্যন্ত ওমিক্রনে মোট কতজন মারা গেছে, এ সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, শুধু পরীক্ষা ও শনাক্ত করলেই চলবে না। রাজধানীসহ সারা দেশে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে বহু মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করছে। এতে করোনার সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে না চললে সংক্রমণ ও মৃত্যুঝুঁকি আরও বাড়বে বলেও সতর্ক করেন তিনি।

এদিকে, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বর্তমান পরিস্থিতি দু-তিনদিন পর্যবেক্ষণের পর স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সরকার ‘অ্যাকশনে’ যাবে।

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ১১ জানুয়ারি থেকে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষ তা মানছে না। প্রশাসনের অবস্থানও কঠোর নয়। সংক্রমণ প্রতিদিনই বাড়ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা এরই মধ্যে বলে দিয়েছি, দু-তিনদিন একটু পর্যবেক্ষণ করবে, তারপর কিছু কিছু অ্যাকশনে যাব। আমরা প্রথম থেকেই অ্যাকশনে যেতে চাই না। আগে একটু দেখতে চাচ্ছি, মানুষ মানে কি না।

তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ওয়াচ করতে বলছি। তারপর সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে আমরা কাল-পরশুর মধ্যে ইনশাআল্লাহ, আমরা কিছু একটা চেষ্টা করব।

তিনি আরও জানান, এখন থেকে ৬০ বছর থেকে কমিয়ে ৫০ বছরের ব্যক্তিদেরও বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। ডিজি হেলথ এ বিষয়টি অ্যাপে দিয়ে দিচ্ছেন রেজিট্রেশনের জন্য। আর যারা ফ্রন্টলাইনার আছে তারা খুব দ্রুত পেয়ে যাবেন।

এদিকে মহামারি করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনে বিশ্বের পাশাপাশি কাবু বাংলাদেশও। ওমিক্রনের ভয়াবহতা ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে দেশে। কয়েকদিন আগেও দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিম্নমুখী ছিল। কিন্তু ওমিক্রন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আবারও চাপের মুখে ফেলেছে।

আগের তুলনায় দেশে গত এক সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষায় করোনা রোগী শনাক্তের হার ২২২ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ৬১ শতাংশ।

এসএইচ-২৫/১৭/২২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)