ব্যাংকের অবস্থা কোথায় খারাপ: অর্থমন্ত্রী

ব্যাংকের অবস্থা কোথায় খারাপ, তা সাংবাদিকদের কাছে জানতে চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মঙ্গলবার ঢাকায় সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সরকারি কর্মচারীদের গৃহনির্মাণ ঋণ ব্যবস্থাপনা মডিউল উদ্বোধনের পর তিনি ব্যাংক খাতের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান।

অনুষ্ঠান শেষে চলে যাওয়ার সময় ইসলামী ব্যাংকসহ দেশের সার্বিক ব্যাংকব্যবস্থা নিয়ে তাঁর মন্তব্য জানতে চান সাংবাদিকেরা। জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংকের অবস্থা কোথায় খারাপ, লিখিত দিয়ে যান, আমরা খতিয়ে দেখব।’

ব্যাংক খাতের প্রকৃত চিত্র বোঝার উপযুক্ত ক্ষেত্র হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে কিছু জানতে চেয়েছেন কি না, তা জানা যায়নি।

অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, হিসাব মহানিয়ন্ত্রক মো. নুরুল ইসলাম এবং অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুরশেদুল কবীর, ইসলামী ব্যাংকের এমডি মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা প্রমুখ।

সরকারি কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা’ প্রণয়ন করে সরকার।

এরপর ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর প্রণয়ন করা হয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের শিক্ষক/কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা। একই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ২৭ জুন প্রণয়ন করা হয় প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা।

নীতিমালাগুলো অনুযায়ী গৃহনির্মাণ ঋণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। বলেন, গৃহনির্মাণ ঋণের জন্য যে ব্যবস্থা চালু রয়েছে, তাতে অধিকাংশ সময় আবেদনকারীর আবেদনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বেশ সময় লেগে যায়। আবেদনের অবস্থা কী বা কোন পর্যায়ে আছে, তা জানারও কোনো সুযোগ থাকে না আবেদনকারীদের।

অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, ঋণ আবেদনপ্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করা হলে এ ধরনের সমস্যা দূর হবে। তাঁর মতে, ঋণ আবেদনপ্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করা হলে আবেদনকারী সরাসরি অনলাইনে অর্থ বিভাগে আবেদন করতে পারবেন। ব্যাংক ও মন্ত্রণালয় মিলে অল্প সময়ের মধ্যে অর্থ বিভাগ থেকে সুদ-ভর্তুকির মঞ্জুরি আদেশ জারি করাও সম্ভব হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবাই জানি ম্যানুয়াল (কাগজে-কলমে) ও ডিজিটাল পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য কী। ডিজিটাল পদ্ধতিতে হলে আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। আগে যদি লাগত এক মাস, এখন সেটা হবে ১৫ দিনে। সবচেয়ে বড় কথা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে এখন।’

এদিকে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ দেওয়ার পদ্ধতি সহজ করা বা অনলাইনে আবেদনের প্রক্রিয়া করা হলেও সাধারণ মানুষের জন্য একই পদ্ধতি চালু করার বিষয়ে সরকার এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবকিছুতেই পরিবর্তন এনেছি। আগে যেভাবে বাজেট পেশ করতাম, সেখানেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। সবকিছু ডিজিটাল করা হয়েছে।’

অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি নিজেও একজন নিরীক্ষক ছিলাম। তখন একটাই অভিযোগ পেতাম, মাস শেষে লাইন ধরে বসে থেকেও পেনশনের টাকা পাওয়া যায় না। ভাবতাম, এটা কী করে সম্ভব? পেনশন কেন পাওয়া যাবে না? আসলে তখন সবকিছু ছিল কাগজে-কলমে। স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা না থাকার কারণেই সমস্যা ছিল বেশি। এখন কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’

সরকার সর্বজনীন পেনশনের যে কর্মসূচি চালু করতে যাচ্ছে, তা দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেন অর্থমন্ত্রী। তবে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি আর হচ্ছে না। এর বদলে হচ্ছে জাতীয় পেনশন ব্যবস্থা। এ বিষয়ে একটি আইন পাস হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।