দিনমজুর শাহ আলমের করোনাভাইরাস জয়

করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের প্রথম রোগী শাহ আলম। চিকিৎসকদের চেষ্টা আর স্ত্রীর সেবায় প্রাণঘাতী এই ভাইরাসকে জয় করেছেন তিনি। প্রথম সুস্থ ব্যক্তিকে তাই অভিনন্দন জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে ২৯ মার্চ ঢাকা থেকে ট্রাকে করে রংপুর যাচ্ছিলেন দিনমজুর শাহ আলম। পথে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আতঙ্কিত হয়ে ট্রাকে থাকা অন্য যাত্রীরা তাকে জোর করে বগুড়ার মহাস্থানগড়ে নামিয়ে দেন। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

অবস্থার অবনতি হলে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর কবীরের তত্ত্বাবধায়নে শাহ আলমকে পাঠানো হয় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের হৃদরোগ বিভাগে। সেখানে সন্দেহ হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে পাঠায় করোনাভাইরাস চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে।

তার নমুনা পরীক্ষার পর করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া যায়। এরপর ২৭ দিন চিকিৎসক-নার্সদের চেষ্টায় এখন পুরোপুরি সুস্থ রংপুরের শাহ আলম। শুক্রবার দুপুর ১২টায় তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

শাহ আলম বলেন, ‘আমি তো মরেই গেছিলাম। নিজেই বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আল্লাহ আমাকে বাঁচায় দিছে। এখানকার ডাক্তাররাও অনেক ভালো। তারা সারাক্ষণ আমার খোঁজ-খবর নিছে। আমার সেবা-যত্ন করছে নার্সরা। আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।’

এই কয়দিন তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিলেন মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শফিক আমিন কাজল বলেন, ‘শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের হৃদরোগ বিভাগ থেকে শাহ আলমকে আমার এখানে ভর্তি করা হয়। পরদিনই পরীক্ষার পর আমরা জানতে পারি, তিনি করোনা পজেটিভ। ওনার সব ধরনের উপসর্গই ছিল। এরমধ্যে শ্বাসকষ্ট বেশি ছিল। আমাদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সবসময় তার খোঁজ নিয়েছেন। ৪-৫ দিনের মধ্যেই তার উপসর্গ কমে আসতে শুরু করে। রোগীর অ্যান্টিবডি ভালোভাবে কাজ করায় দ্রুত ইমগ্রুভ করছিলেন।’

চিকিৎসাকালের অভিজ্ঞতা জানিয়ে শাহ আলম বলেন, ‘প্রথম পাঁচদিন আমার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। দুই-তিনদিন কিছুই খেতে ইচ্ছা করেনি। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে রুচি ফেরে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমদিকে কিছুটা ভয় পেলেও আমার স্ত্রী সাজেদা আসার পর মানসিক জোর কিছুটা বাড়ে। তাছাড়া ডাক্তার, নার্সসহ অন্যদের যত্নে আমার মনে হয়েছে, ভালো হয়ে যাব।’

শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহ আলম ঢাকায় থাকেন ১৪-১৫ বছর ধরে। ছোটখাট কাজের পাশাপাশি মানুষের সাহায্য- সহযোগিতায় চলত তার সংসার।

শাহ আলমের স্ত্রী সাজেদা বেগম জানান, তিনি শুনেছেন জন্মের পর থেকেই শাহ আলমের শ্বাসকষ্ট রোগ আছে। তিনি বলেন, ‘আমার বিয়ে হয়েছে ২৬-২৭ বছর আগে। তখন থেকেই তাকে প্রায়সময় শ্বাসকষ্টে ভুগতে দেখেছি।’

শুরু থেকেই স্বামীর পাশে ছিলেন সাজেদা বেগম। আংশিক বিকলাঙ্গ ও করোনাভাইরাস আক্রান্ত স্বামীর সেবা করতে একটুও ভীত হননি তিনি। এমনকি নিজে ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হননি। গ্রামে একটা মক্তব চালান তিনি। এখন তার চাওয়া, গ্রামে ফিরে যাওয়ার পর যেন সবাই তাদের স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেন। মক্তবটি যেন বন্ধ করে দেওয়া না হয়। কারণ এই মক্তবই তার আয়ের উৎস।

সাজেদা আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘আমার স্বামীকে সুস্থ করে তোলার জন্য আমি ডাক্তারদের ধন্যবাদ জানাই। এখন আমার একটাই চাওয়া, গ্রামের সবাই যেন আমাদের ভালোভাবে নেয়। আমরা যেন আগের মতো সবার সঙ্গে চলাফেরা করতে পারি।’

করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে ফেরা মানুষেরা আর দশজনের মতোই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ডা. শফিক আমিন কাজল বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, শাহ আলম এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। আর দশজন মানুষের মতোই তিনি সামাজিক দূরত্ব মেনে সব কাজ করতে পারবেন। করোনাভাইরাস একটা রোগমাত্র। যে কারও এই রোগ হতে পারে। তাই আমি আহ্বান জানাব, কেউ যেন সুস্থ হওয়া শাহ আলমকে অবহেলা না করে।’

আরএম-০১/২৫/০৪ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্যসূত্র: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড)