“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি মরে গেলে গেছি, কিন্তু আমার পরিবারকে একটু দেইখেন!”

একজন করোনা রোগী বহনকারী এম্বুলেন্স ড্রাইভার এর আকুতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে! তাঁর ভিডিও বার্তাটি পুরোটা দেখলাম। অনেক কষ্ট, অনেক না পাওয়া, দেশের প্রতি অনেক ভালোবাসা, নিজের সাহস নিয়ে এই করোনা যুদ্ধে নামা এক বীরের কণ্ঠস্বর এটা! তাঁদের আমরা বীর বলিনা, কারণ আমাদের দৃষ্টি এই শ্রেণী পর্যন্ত পৌঁছায় না! এই স্তরের মানুষজন কাজ করে যায় কিছু না পাবার আশায় কিংবা হয়তোবা দূর ভবিষ্যতে কিছু একটা খড়কুটো পাবার আশায়। অনেকেই হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছে, তাঁদের তো সময় নাই ত্রাণ এর জন্য লাইনে দাঁড়াবার। তাঁরা করোনা রোগীদের নিয়ে এক হাসপাতাল হতে এক হাসপাতাল দৌড়ে যাচ্ছেন, সালাম আপনাদের। হয়তো পেটের দায়ে এই কাজ করছেন, কেউ কেউ একেবারেই চাকুরীক্ষেত্রে দায়িত্ববোধের জায়গা হতে করছেন।

তাঁরা ভিতু কাপুরুষ না, কিংবা স্বার্থান্বেষী চোরের দলে নয় যারা এখনো করোনার মাঝে মাস্ক নিয়ে দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়ে! তাঁদের আসলে ঘরে বসে থাকারও উপায় নেই। এই যে এরা কাজ করছেন, তাঁদের অনেকের চাকুরী হাসপাতালে স্থায়ী না, দৈনন্দিন ভিত্তিতে ড্রাইভার, মাস্টার রোলে চাকুরী করেন, যাদের বেতনও সময় মতো পাওয়া হয়না। কানে বাজছে তাঁর শেষ দিকের লাইনগুলো, “আজকে আমি মারা গেলে কাল আমার বউ বাচ্চা একটা টাকা পাবেনা সরকার হতে কারণ আমি সরকারী চাকুরী করলেও স্থায়ী না, আমরা সরকারী পেনশন পাবো না, আমি মরে গেলে গেছি, কিন্তু আমার পরিবারকে একটু দেইখেন!”

করোনা যুদ্ধে যারা এভাবে কাজ করে চলছে ত্রাণের জন্য লাইনে না দাঁড়িয়ে, আশা করি আপনি নিশ্চয়ই তাঁদের চাকুরী হাসপাতালগুলোতে স্থায়ীকরনের সুযোগ করে দেবেন, এবং বেতন যেন সময় মতো পায়, তার নির্দেশ দেবেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা।

এই মানুষগুলো সংগ্রামী যোদ্ধা। তাঁদের মনোবল কোনভাবেই ভাঙা যাবেনা এই মুহূর্তে| তাছাড়া তাঁরা বেতন সময় মতো না পেলে খাবে কি তাঁদের পরিবারগুলো? আপনার কাছেই তো তাঁরা এসব আশা করতে পারে, নিশ্চয়ই তাঁদের এই আকুতি আপনার কাছে পৌঁছাবে। আপনি সকলের প্রধানমন্ত্রী, এই খেটে খাওয়া মানুষগুলোরও।

আমরা এমন একটা সমাজে বসবাস করি, যেখানে নকল মাস্ক বিতরণ করে, চুরি বাটপারি করে আমেরিকা ইউরোপে বাড়ী বানায় কিংবা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে তাঁদের ছেলে মেয়েদের জন্য বিদেশ হতে ডিগ্রী কিনে আনলে, তাঁদের সম্মান করি, সালাম দেই, আর এই খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে ধরেই নেই “কলুর বলদ” এর মতো সারাদিন রাত এক করে একটানা ঘানি টেনে যাবে আমাদের সেবা দানের জন্য| আমরা একটা ‘ভুল স্বর্গে’ বসবাস করছি!

সময় এসেছে এই মানুষগুলোর দিকে তাকানোর, কারণ এই যুদ্ধে তাঁদের অনেকটুকু অবদান আছে, আমরা সেইসব যোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাই। তাঁদের গাড়ীতে অনেক করোনা রোগী মারা যাচ্ছে, তাঁদের পৌঁছে দিচ্ছে কবর পর্যন্ত। কেউ কেউ জানাজায় অংশ নিচ্ছেন| আপনার কাছে অনুরোধ করি, এই খেটে খাওয়া মানুষগুলো ও তাঁদের পরিবারের মানুষজনের পেটে যেন খাবার জুটে, সেই ব্যবস্থা করার।

(রাশেদা রনক খানের ফেসবুক আইডি থেকে সংগৃহিত)