“২১ শতকে এসে ভাবনায় পড়লেন বাদশা আকবর”

ছবি: হাসান তানভীর

#গল্প_এক:

সেদিন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক আক্ষেপ করে বলছিলেন যে, এখন একাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে শিক্ষকরা বেশি আলোচনা করেন কে কত টাকার বেশি ভাগ পাবেন এমন কাজ নিজে বাগিয়ে নিতে। অথচ যেই মিটিংয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল কিভাবে ছাত্রদের শিক্ষার মান উন্নয়ন করা যায় কিভাবে টিচারদের জবাবদিহিতার জায়গায় আনা যায় কিংবা কিভাবে ওভারল শিক্ষা ব্যবস্থা বা শিক্ষার সিস্টেম ডেভলপ করা যায়।

#গল্প_দুই:

গত দিন ঢাকায় যাওয়ার পরে আমার বিশ্ববিদ্যালয় এক প্রাক্তন ছাত্রের সাথে গল্প হচ্ছিল, কথায় কথায় কথা উঠলো শিক্ষকদের সম্পর্কে, তারা আসলে কেমন ছিল?
সেই প্রাক্তন শিক্ষার্থী স্ট্রেট ফরওয়ার্ড বললো আমার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকরা তো একপ্রকার হিপোক্রেট, এরা ক্লাসরুমে বড় বড় বক্তৃতা দেয় নীতি আদর্শের কথা বলে অথচ নিজেরা ভুয়া ভাউচার দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে নেয়। নামকাওয়াস্তে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রজেক্ট থেকে টাকা এনে সামান্য কিছু কাজ করে বাকি টাকা বেমালুম তারা মেরে দিছে।

#গল্প_তিন:

বিদেশে খুব ভালো ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে বাংলাদেশে ফেরত এক পরিচিত ভাই এর সাথে বসে বসে চা খাচ্ছিলাম। সে খুব আক্ষেপ নিয়ে বলল যে বিদেশে পড়ালেখার সিস্টেম এত ভালো এত সহজে যে কোন ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া যায় শুধু IELTS থাকলে এমনকি পড়ালেখা ,থাকা‌ খাওয়ার খরচও লাগে না অথচ তার বিশ্ববিদ্যালয় তার ডিপার্টমেন্টের এমন অনেক শিক্ষক বিদেশ থেকে পড়ালেখা করে এসেছেন কিন্তু কোনদিন সেই পথটা দেখিয়ে দেননি। সেই সকল শিক্ষকরা মনে হয় ইনফেরিয়র কমপ্লেক্সিটিতে ভোগেন, তারা ভাবেন যে আমার শিক্ষার্থী আমার থেকে ভালো জায়গা থেকে লেখাপড়া করবে এটা তো হতে পারে না।

#গল্প_চার:

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর সাথে গল্প হচ্ছে। মামা আর বইলেন না এই শিক্ষকরা এত চরিত্রহীন ছোটলোক যে অন্য শিক্ষককে শায়েস্তা করার জন্য এরা সেই শিক্ষকের ঘরে ছাত্রী ঢুকায় দিয়ে সে শিক্ষকের বারোটা বাজায় দেয়। আর পরীক্ষার হল থেকে ছাত্রদের খাতা গায়েব করে দেয়া তো কমন ব্যাপার শুধুমাত্র অন্য শিক্ষককে শায়েস্তা করার জন্য এগুলো করে।

#গল্প_পাঁচ:
সেদিন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ শিক্ষকের সাথে গল্প হচ্ছিল, খুব আক্ষেপ নিয়ে বলছিল, তানভীর বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আসলে শিক্ষক কাম রাজনীতিবিদ নাকি রাজনীতিবিদ কাম শিক্ষক ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা? এদের ক্লাসের চাইতে টিভি টকশো আর রাজনৈতিক অনুষ্ঠানেই বেশি বেশি আগ্রহ। নতুন কিছু নিয়ে বা আপডেট বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করার মত সময় নাকি তাদের হাতে নেই।

উপরের গল্পগুলো হয়তোবা শুধু গল্পই । তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তোবা সঠিক এবং মাঝেমধ্যে পত্র পত্রিকাতেও তো তাই দেখা যায়।

একজন ছাত্রের নীতি-নৈতিকতা আদর্শিক শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে তার শিক্ষকের কাছ থেকেই। কিন্তু সেই শিক্ষকেরই যদি নীতি আদর্শ হয় এ পত্রিকার খবর এর মতন তাহলে ভবিষ্যতে ওই সকল শিক্ষক বেষ্টিত বিশ্ববিদ্যালয় হতে দুর্নীতিবাজ চাঁদাবাজ মেয়েবাজ প্রতারক ভন্ড এগুলি উৎপন্ন হবে। কারণ শিক্ষার যন্ত্র যারা চালায় তারাই তো ওই চারিত্রিক গুণাবলী সমৃদ্ধ।

এখন নিশ্চয়ই #অভিভাবকরা হয়তোবা ভাবছেন, কাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন তাদের সন্তানদেরকে ভবিষ্যতে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে?এর চেয়ে হয়তোবা বিদেশে সন্তানকে পড়তে পাঠিয়ে দেওয়াই বেশি নিরাপদ এবং সময়োপযোগী।
এভাবেই হয়তোবা চলে যাচ্ছে দেশ থেকে মেধাবী সন্তানরা, যার সুফল ভোগ করছে সেই সকল উন্নত দেশ।

#গল্পের_সারাংশ আমি বলতে চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক হয়তোবা খারাপ নয় কিছু কিছু শিক্ষক আছেন যারা পেশাদারিত্বের জায়গা থেকেই শিক্ষা দান করে থাকেন তারা এটুকু জানেন বোঝেন যে তাদের রুটি রুজির মাধ্যমই হচ্ছে তার শিক্ষার্থীদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা এবং সঠিক পাঠ দান করা। কিন্তু কিছু কিছু শিক্ষকদের কৃতকর্মের জন্য আজ সেই সকল প্রকৃত শিক্ষকদের মুখ দেখানোর দায় হয়ে গেছে।

সেই সকল প্রকৃত শিক্ষকদের জন্য রইল অনেক অনেক ভালোবাসা কৃতজ্ঞতা ও অনেক দোয়া তারা যেন ভাল থাকেন সুস্থ থাকেন কারণ শেষ ভরসা তো সেই ভালো মানুষ সেই ভালো শিক্ষকদেরই উপর।
উপরে লেখাটি একান্ত আমার ব্যক্তিগত মতামত আপনি দ্বিমত পোষণ করতেই পারেন।

লেখা: হাসান তানভীর

এআর-০১/৩০/০৮ (অনলাইন ডেস্ক)