কলেজছাত্রী লিজা আত্মহননের ঘটনায় পুলিশের তথ্যে গরমিল

রাজশাহীর শাহমখদুম থানা থেকে বেরিয়ে গায়ে আগুন দিয়ে কলেজছাত্রী লিজা রহমানের (১৮) আত্মহননে ঘটনায় পুলিশের তথ্যে গরমিল পাওয়া গেছে।

ঘটনার তদন্তে নেমে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্তকারী দল শাহমখদুম থানা পুলিশ ও ভিকটিম সার্পোট সেন্টারের দেয়া তথ্য-উপাত্তে এই গরমিল পায়।

এই ঘটনা তদন্তের অংশ হিসেবে শুক্রবার দ্বিতীয় দফা রাজশাহীতে এসেছে তদন্তকারী দল। তদন্ত শেষ করে আগামী রোববার কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেবার কথা।

তদন্ত কমিটির প্রধান এবং মানবাধিকার কমিশনের অভিযোগ ও তদন্ত শাখার পরিচালক আল মাহমুদ ফাইজুল কবির সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিশনের এই তদন্ত কমিটি পুলিশ, ভিকটিম সার্পোট সেন্টার, লিজার পরিবার, স্বামী শাখাওয়াতের পরিবার ও দুইজনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।

শাহমখদুম থানা পুলিশ ও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার কর্তৃক তদন্ত কমিশনকে দেয়া তথ্য, ভিডিও ফুটেজ, এজাহার ও সাধারণ ডায়েরির তথ্য এবং সাক্ষীর দেয়া তথ্যে গরমিল পাওয়া গেছে।

প্রমাণ তুলে ধরে মাহমুদ ফাইজুল কবির বলেন, পুলিশের সাধারণ ডায়েরিতে লিজার শ্বশুর-শাশুড়ির নাম দেয়া আছে। অথচ ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার তথ্য দিয়েছে- লিজা তার শ্বশুর-শাশুড়ির নাম জানতেই বাইরে গিয়েছিলেন। থানা চত্বর থেকে বাইরে গিয়েই শরীরে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা আরো জানান, লিজা রহমান মৃত্যুর আগে তার ভাইকে একটি ভিডিও সাক্ষাৎকার দেন। যেখানে তিনি দাবি করেন, পুলিশ মামলা নিতে রাজি ছিলো না। মামলা না নেয়ায় তিনি থানা থেকে বেরিয়ে গায়ে আগুন দেন।

এর আগে নগর পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটি এই ঘটনায় পুলিশের গাফেলতি পায়নি। গত ৬ অক্টোবর আরএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড তদন্ত কমিটি পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবিরের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন।

নগর পুলিশের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কলেজছাত্রী লিজা রহমান তার স্বামীর দ্বারা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অভিযোগ করতে এসেছিল শাহমখদুম থানায়। কিন্তু এটি কোন ফৌজদারি অপরাধ না হওয়ায় মামলা রেকর্ড করেননি ওসি।

পরে লিজাকে দুই নারী কনস্টেবলের সঙ্গে থানা চত্বরে অবস্থিত ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়।

কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে এসেই লিজা মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সামনে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এরপর তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনাটি শাহমখদুম থানার ওসি হিসেবে কোন রেকর্ড না রাখায় তাকে কৈফিয়ৎ তলব করা হতে পারে।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর দুপুরের দিকে রাজশাহীর শাহমখদুম থানা থেকে বেরিয়ে গায়ে আগুন দেন লিজা রহমান। ৬৩ শতাংশ দগ্ধ শরীর নিয়ে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হেরে যান লিজা।

এর আগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেয়ার পর ওই রাজশাহী মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির এই ছাত্রী জানিয়েছিলেন, স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়েরে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে থানার সামনেই আত্মহত্যার চেষ্টা চালান তিনি।

গত জানুয়ারীতে প্রেমে করে পরিবারের অমতে বিয়ের করেন তারা। বিয়ের পর থেকেই নগরীর গাঙপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার করছিলেন এই তরুণ যুগল।

এ ঘটনায় ২ অক্টোবর রাতে নিহতের বাবা আলম মিয়া বাদি হয়ে শাহমখদুম থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করেন।

এই মামলায় পরদিন রাতে লিজা রহমানের স্বামী সাখাওয়াত হোসেনকে (১৮) গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে মামলার অপর আসামী তার শ্বশুর মাহবুবুল খোকন ও শ্বাশুড়ি নাজনিন বেগম পলাতক।

ওই ছাত্রীর আত্মহননে থানা পুলিশের গাফিলতি এবং পারিবারিক কলহ খতিয়ে দেখতে মানবাধিকার কমিশনের চার সদস্যের কমিটি গঠন করে।

বিএ-০৩/২৫-১০ (নিজস্ব প্রতিবেদক)