রাজশাহীতে নানা আয়োজনে মহান বিজয় দিবস উদযাপন

ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে রাজশাহীতে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। মহান বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরেই শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাজশাহীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। রাজশাহী মহানগরীর ভুবনমোহন পার্ক শহীদ মিনার ও রাজশাহী কলেজ শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন তারা।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ: মহান বিজয় দিবসে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য বিজয় র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে নগরীর কুমারপাড়ায় দলীয় কার্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পন করে মহানগর আওয়ামী লীগ। এরপর আওয়ামী লীগের অন্যান্য সহযোগী সংগঠন, বঙ্গবন্ধু পরিষদসহ সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পরে নগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে থেকে বের করা হয় বর্ণাঢ্য বিজয় র‌্যালি। এতে নেতৃত্ব দেন সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন। র‌্যালিটি নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট হয়ে মনিচত্বর ঘুরে রাজশাহী কলেজের সামনে দিয়ে লোকনাথ স্কুল হয়ে সিটি কলেজের সামনে দিয়ে মালোপাড়া হয়ে গণকপাড়া হয়ে পুনরায় আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।

বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি রাজশাহী মহানগর: বিজয়ের প্রথম প্রহর সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিটে ভুবনমোহন পার্ক শহীদ মিনারে প্রথমেই রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। রাজশাহী ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ এই পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

এ সময় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগরের সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু, সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু, নগর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এন্তাজুল হক বাবু, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, সিরাজুর রহমান খান, সাদরুল ইসলাম, আবদুল মতিন, মনির উদ্দিন পান্না, নাজমুল করিম অপু, জাসদের নগর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে)। এরপর একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বাসদ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, যুবমৈত্রী, ছাত্রমৈত্রী, জাতীয় যুবজোট, রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপ, কমিউনিস্ট পার্টি, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, আদিবাসী ছাত্র পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংষ্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সবাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার শপথ করেন। শপথ বাক্য পাঠ করান নগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু। বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে রাজশাহীর কোর্ট শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। আর রাতেই রাজশাহী কলেজ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ।

এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার দিবসের সূচনা লগ্নে ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। একই সময়ে সকল সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

সকাল নয়টায় রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো: আব্দুল মান্নান প্রধান অতিথি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। তিনি এ সময় জেলা সদরের বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, বিএনসিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, শিশু কিশোর সংগঠন, কারারক্ষী, বাংলাদেশ স্কাউট, রোভার স্কাউট ও গালর্স গাইড এর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণ করেন।

জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদের এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডিআইজি একেএম হাফিজ আক্তার, পুলিশ কমিশনার মো. হুমায়ুন কবির, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. জাকির হোসেন ও পুলিশ সুপার মো: শহীদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রায় ১০০টি দল অংশগ্রহণ করে।

সকালে কামারুজ্জামান চত্বরে আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রবেশ মূল্য ছাড়া সকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত যাদুঘর, পার্ক, চিড়িয়াখানা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। এদিন হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশু সদন, শিশু নিবাস, অন্ধ, মুক ও বধির বিদ্যালয়, সেফ হোম, এস ও এস শিশু পল্লী, শিশু বিকাশ কেন্দ্র এবং বেসরকারি এতিমখানায় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বাদ জুম্মা মসজিদসমূহে মোনাজাত এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে সুবিধামত সময়ে প্রার্থনা করা হয়। আজ সকল সিনেমা হল ও জনবহুল মোড়সমূহে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে।

বিকেলে রিভারভিউ কালেক্টরেট স্কুল মাঠে আলোচনা সভা ও মহিলাদের ক্রীড়ানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই সময়ে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ একাদশ বনাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা একাদশ এবং মেয়র একাদশ বনাম বিভাগীয় কমিশনার একাদশ প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সন্ধ্যায় সিটি কর্পোরেশনের গ্রীন প্লাজায় খেতাব প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যা থেকে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহে আলোকসজ্জা শোভা পাবে।

পদ্মা স্কুল এ্যান্ড কলেজ: মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে পদ্মা স্কুল এ্যান্ড কলেজের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে শিশু কিশোরদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। পদ্মা স্কুল এ্যান্ড কলেজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আব্দুর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি কপোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মমিন। এতে বিশেষ অতিথীর বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষ আব্দস সাত্তার। শিশু কিশোরদের ড্রইং কবিতা আবৃত্তি, দেশেরগান, উপস্থিত বক্তব্যসহ ১১টি ইভেন্টে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। মোট ৩৩জন বিজয়ীকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।

বিএ-০৫/১৬-১২ (নিজস্ব প্রতিবেদক)