বিএনপি’র রংপুর সমাবেশ: বাধা পেরিয়ে কর্মীদের ঢল

রংপুরে পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যেও বিএনপির চতুর্থ বিভাগীয় গণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সমাবেশে সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন সরকার গঠনের ডাক দেন দলের নেতারা।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “সংসদকে বিলুপ্ত করে, সরকারকে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তার দায়িত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সেই নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নতুন করে নির্বাচন হবে এবং সেই নির্বাচনের মাধ্যমে সকলের গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে সরকার গঠন করবে। ”

শনিবার কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। যা চলে বেলা ৫টা পর্যন্ত।

ওই সমাবেশে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ার কারণে জন দুভোর্গ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট, বিএনপি নেতাদের ওপর গুম খুন নির্যাতন, সরকারি নেতাদের দুর্নীতি ও দায়িত্ব পালনে অবহেলাসহ আরও বিষয়ে বক্তব্য রাখেন দলের নেতারা।

এ সময় সমাবেশে অংশ নেয়া হাজার হাজার নেতাকর্মী সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেয়। সেই সাথে তারা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানান।

এদিকে সমাবেশের একদিন আগে থেকে অর্থাৎ শুক্রবার সকাল থেকে রংপুরের আটটি জেলায় পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এ কারণে সমাবেশে আসতে নানা ভোগান্তির মুখে পড়তে হয় বিএনপির নেতাকর্মীদের।

রংপুর মোটর মালিক সমিতির ডাকা এই ধর্মঘট শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে অর্থাৎ সমাবেশ চলাকালীন পুরো সময় জুড়েই ওই আট জেলায় দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ছিল

তবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দাবি, গণসমাবেশ বানচাল করতেই এই ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে।

সমাবেশে অংশ নেয়া একজন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “হঠাৎ করে গতকাল (শুক্রবার) থেকে গাড়িঘোড়া বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু তারপরও এই রংপুর বিভাগে এতো বাধা বিঘ্ণ করে কোন মানুষকে রাস্তায় আটকাতে পারে নাই।”

“হাসিনার সরকার বিএনপির চাপ সহ্য করতে পারছে না। এজন্য তারা গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু এভাবে তারা গণ জাগরণ বন্ধ করতে পারবে না।” বলেন সমাবেশে আগত এক ব্যক্তি।

সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে বিএনপির বিভিন্ন জেলা উপজেলার কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে ট্রাক, পিক-আপ, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেলসহ ছোট বড় যানবাহনে করে এই গণ সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায়।

বেলা গড়াতেই মিছিলে মিছিলে সমাবেশস্থলে নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। এসময় তারা সরকার-বিরোধী নানা স্লোগান দেন। সেইসাথে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন।

সমাবেশের মাঠ ছাড়াও রংপুর নগরজুড়ে সড়কের দুই পাশে সাঁটানো হয়েছে দলীয় পোস্টার। নগরীর প্রবেশ পথে তৈরি করা হয়েছে তোরণ।

সমাবেশে আসা আগতদের হাতে ছিল বিএনপির প্রধান নেতাদের প্রতিকৃতি, দলীয় পতাকা সেই সঙ্গে সরকারবিরোধী স্লোগান এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সম্বলিত পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন।

কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারীসহ দেশটির বিভিন্ন জেলা থেকে পথ ভেঙে ভেঙে যে যেভাবে পেরেছেন সমাবেশস্থলে এসেছেন।

সমাবেশে যোগ দিয়ে বিএনপি কর্মী ওয়াদুদ বলছিলেন, “বাড়ি থেকে অনেক পথ ভেঙে এতদূর এসেছি। সৈয়দপুর পর্যন্ত আর কোনও গাড়ি নিয়ে আসেনি। একটা সিএনজি পেলেও সেটি বেশি দূর আসেনি। ২০ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে এসেছি।”

গণ সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে পারেন, এমন আশঙ্কা ও হয়রানি এড়াতে অনেকে কয়েকদিন আগে থেকেই রংপুর শহর ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন।

আবার অনেকেই আগের রাতে এই ঈদগাহ মাঠে তাঁবু খাটিয়ে না হলে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটিয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই কালেক্টরেট মাঠটি বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ভরে যায়।

বিএনপির এবারের গণ সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক সামছুজ্জামান সামু। প্রধান অতিথি হিসেবে আছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি; ভোলা, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও যশোরে পাঁচ নেতাকর্মী নিহত এবং সারা দেশে আওয়ামী লীগের হামলার প্রতিবাদে প্রতিটি বিভাগে সমাবেশ করছে বিএনপি।

এর আগে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনায় সমাবেশ করেছিল দলটি।

সমাবেশে যোগ দেয়া কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী-কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব হারুন উর রশিদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার ভাষণে বলেন, “আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য, প্রতি পাঁচ বছর পর পর যাতে ভোট দিতে পারি, প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারি। আমাদের সোজা কথা তত্ত্ববধায়ক সরকার ছাড়া এই দেশে হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন হবে না। আমাদের এই একটাই দাবি।”

এর আগে ২০১৩ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বড় সমাবেশ করেছিল দলটি।

এসএইচ-০৪/২৯/২২ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)