থানায় জেরার মুখে যা বললেন নুসরাত (ভিডিও)

সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে (১৮) শ্লীলতাহানি করেন ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা। এ বিষয়ে অভিযোগ জানাতে অভিভাবকদের সঙ্গে থানায় যায় সে। সেখানে আরেক দফা থানার ওসির (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা)। এই জিজ্ঞাসাবাদ আবার রেকর্ড করেও রাখা হয়। থানায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিওটি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে নুসরাতের মৃত্যুর পর।

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরছান্দিয়া গ্রামের মাওলানা একেএম মানিকের মেয়ে। তিনি এবার সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা থেকে আলিম (এইচএসসি সমমান) পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজউদ্দৌলা গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহানের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে নুসরাতের বরাত দিয়ে পরিবারকে গত ২৭ মার্চ দুপুরে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা তাঁর পিয়ন নুরুল আমিনকে দিয়ে নুসরাতকে অধ্যক্ষের রুমে ডেকে নেন। নুসরাত তখন আরো তিন-চারজন বান্ধবীকে নিয়ে অধ্যক্ষের রুমে ঢুকতে চাইলে শুধু তাঁকে ঢুকতে দেন পিয়ন। এরপর দরজা আটকে অধ্যক্ষ বিভিন্ন প্রলোভন দেখান। ১ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগে তাঁকে প্রশ্ন দেওয়া হবে, যদি তিনি অধ্যক্ষের কুপ্রস্তাবে রাজি হন। এরপর অধ্যক্ষ নুসরাতের গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পর নুসরাত দৌড়ে কক্ষ থেকে বের হয়ে বাইরে গিয়ে অচেতন হয়ে পড়ে যান।

ভিডিও করার সময় নুসরাত অঝোরে কাঁদছিলেন এবং তার মুখ দু’হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। তাতেও ওসির আপত্তি। বারবারই ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি এও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে তোমাকে কাঁদতে হবে।’

পুরো ভিডিও জুড়েই নুসরাত কাঁদছিলেন। একসময় ভিডিওধারণকারী তাকে ধমকের সুরে বলে— ‘কাঁদলে আমি বুঝবো কী করে, তোমাকে বলতে হবে। এমন কিছু হয়নি যে তোমাকে কাঁদতে হবে।

এতে দেখা যায়, থানার ভেতরে নুসরাতকে জেরা করা হচ্ছে— ‘কিসে পড়া? ক্লাস ছিল?’ ঘটনা জানাতে গিয়ে নুসরাত বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। সেসময় তাকে জিজ্ঞেস করা হয়— ‘কারে কারে জানাইসো বিষয়টা?’ নুসরাত যখন জানায়— তাকে অধ্যক্ষ ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। তখন প্রশ্ন করা হয়— ‘ডেকেছিল, নাকি তুমি ওখানে গেছিলা?’ পিয়নের মাধ্যমে ডেকেছিল বলে নুসরাত জানালে প্রশ্ন করা হয়— ‘পিয়নের মাধ্যমে ডেকেছিল? পিয়নের নাম কী?’ নুসরাত সেসময় পিয়নের নাম বলেন— ‘নূর আলম।’’

ভিডিও’র শেষে নুসরাতের কথা বলা শেষ হলে ধারণকারী বলেন— ‘এইটুকুই?’ আরও কিছু অশালীন উক্তির পাশাপাশি তাকে উদ্দেশ করে বলেন— ‘এটা কিছু না, কেউ লিখবেও না তোমার কথা। আমি আইনগত ব্যবস্থা নেবো। কিছু হয়নি। রাখো। তুমি বসো।’

এরই মধ্যে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে গত ৯ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কে এই ভিডিও করেছিল প্রশ্নে সোনাগাজী থানার ওসি (তদন্ত) বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আজকে অনেকে বিষয়টি জানতে চেয়ে ফোন করায় আমি জানতে পেরেছি।’

আইনজীবিরা জানান, যৌন হয়রানির অভিযোগ করতে আসা কোনো নারীর বক্তব্য ভিডিও ধারণের এখতিয়ার পুলিশের নেই। অভিযোগকারীতে হেনস্থামূলক কোনও প্রশ্ন করার অধিকারও তার নেই। যদি অভিযোগকারীর বক্তব্য শুনে মনে হয়, মামলাটি নেওয়ার মতো তাহলে সে ক্ষেত্রে মামলাটি নেবে। আর ওসি মামলা না নিলে অভিযোগকারী কোর্টে গিয়ে মামলা (নালিশ) করবেন।

তারা জানান, হয়রানির শিকার নুসরাতের ভিডিও ধারণ করার ঘটনাটি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের ২৬ ধারা অনুসারে ফৌজদারি অপরাধ। এখন নুসরাতের পরিবার যদি মনে করে, তবে সংশ্লিষ্ট ওসি’র বিরুদ্ধে ওই ধারায় মামলাও করতে পারবেন।

বিএ-২০/১১-০৪ (আঞ্চলিক ডেস্ক)