রাস্তার পাগলি হলেন মা

তখন শেষ রাত। নীরব নিস্তব্ধ পরিবেশ। হঠাৎ নির্জন বালুর মাঠ থেকে এক নারীর কণ্ঠে আহাজারির শব্দ ভেসে আসছিল। এই করুণ আহাজারির শব্দ সইতে না পেরে পার্শ্ববর্তী বসবাসরত দুই নারী ঘটনাস্থলে ছুটে যান।

সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পান- মানসিক ভারসাম্যহীন নারী (পাগলি) এবং তার পাশেই নাড়িজোড়া সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যাশিশু সন্তান। তখন মা ও শিশুটির সারা গায়ে রক্ত আর বালুমাখা ছিল। পরে দুজনের মধ্যে পারুল নামের এক নারী শিশুটির নাড়ি কেটে তাদের নিজের ঘরে নিয়ে যায়।

শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টায় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার খালগোড়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

এনিয়ে ওই এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। এই নবজাতক শিশুর বাবা কে? কে বা কাদের নির্মম নির্যাতনের শিকার এই পাগালি? এমন নানা প্রশ্ন সচেতন মহলের।

শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে অজ্ঞাতপরিচয়ের এই পাগলি এলাকায় ঘোরাফেরা করছে। তিনি যে সন্তানসম্ভবা তা ৪-৫ মাস আগে সবার নজরে পড়ে। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। কিন্তু শুক্রবার রাতে পাগলির বাচ্চা প্রসবের পর এ নিয়ে এলাকাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

বর্তমানে পাগলি ও নবজাতক স্থানীয় বাসিন্দা অহিদুল পল্লানের স্ত্রী পারুল বেগমের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। কন্যাসন্তান না থাকায় পারুলই শিশুটির লালনপালনের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী।

নিজ উদ্যোগে পাগলি ও নবজাতকের দেখাশোনার দায়িত্ব নেয়া পারুল বেগম বলেন, ‘ফজরের আজানের আগে আমার ননদ আর আমি পাগলির কান্নাকাটির আওয়াজ শুনে বালুর মাঠে যাই। ওইখান গিয়ে এই অবস্থা দেখে পাগলি ও বাচ্চাটাকে আমার ঘরে নিয়ে আসি। বাচ্চায় দুধ না পাওয়ায় দোকানের ল্যাকটোজেন খাওয়াই। আর পাগলি অসুস্থ হওয়ায় ডাক্তার দেখিয়ে তাকে ওষুধ খাওয়াচ্ছি। এখন মা-মেয়ে আমার ঘরে থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার তিন ছেলেসন্তান। কোনো মেয়ে নেই। তাই আমি এই বাচ্চাটাকে আমার সন্তানের মতো করে মানুষ করতে চাই। কিন্তু অনেকে চায়, আমার কাছ থেকে নিয়া যাইতে।’

খালগোড়া বাজার ব্যবসায়ী কালু হাওলাদার বলেন, ‘প্রায় এক বছর ধরে এই পাগলি খালগোড়া বাজারে থাকে। কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদেরকে শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’

ওই বাজারের আরেক ব্যবসায়ী নিদির শীল বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক ও লজ্জাজনক একটি ঘটনা। এ ঘটনার তদন্তসহ অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’

রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আহম্মেদ বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

বিএ-০৬/১৯-০৪ (আঞ্চলিক ডেস্ক)