একজন ডাক্তার দিয়েই চলছে সরকারি হাসপাতাল!

ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে স্বাস্থ্যসেবা বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি মাত্র একজন ডাক্তার দিয়ে চলছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি চরমে।

চরাঞ্চলবেষ্টিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে সাতজন ডাক্তার। এর মধ্যে দুজন ডেপুটিশনে। খাতা-কলমে পাঁচজন ডাক্তারের পোস্টিং থাকলেও দেখা মেলে না একজনেরও।

ডাক্তার সংকটের কারণে হাসপাতালের সরকারি অবকাঠামো, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও কোনো কাজেই লাগছে না রোগীদের। ফলে উপজেলার সিংহভাগ রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণের জন্য ছুটে আসেন জেলা শহরে।

বুধবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের বহিঃবিভাগ, অন্তঃবিভাগ, দন্তঃবিভাগ, গাইনি বিভাগ ও নাক কান গলাসহ সব বিভাগ বন্ধ। শুধু আউটডোরে একজন চিকিৎসক ডা. মতিন সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।

ডা. মতিন বলেন, অফিস নথিতে তিনি উপজেলা পদ্মা নদী চরের চরঝাউকান্দা ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিকে পোস্টিংরত। কিন্তু ওই কমিউনিটি ক্লিনিকটি পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়ার কারণে তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডিউটি করছেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩টি ডাক্তার পদের মধ্যে বর্তমানে রয়েছেন সাতজন। এদের মধ্যে ডেপুটেশনে আছেন দুজন ডাক্তার। বাকি পাঁচজনের মধ্যে অনুপস্থিত চারজন চিকিৎসক। এরা হলেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাইফুল ইসলাম, মেডিকেল অফিসার ডা. রেজাউল করিম, দন্ত বিভাগের চিকিৎসক আইরিন সুলতানা ও গাইনী বিভাগের চিকিৎসক রেদওয়ানা পারভীন।

চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাতজন ডাক্তার আছেন। এদের মধ্যে ডেপুটেশনে আছেন দুইজন। বাকি পাঁচজন ডাক্তার নিয়মিত ডিউটিতে আসেন না। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো ক্ষমতা আমার নেই। আমি শুধু ঊর্ধ্বতনদের অনুপস্থিতির বিষয়টি জানাতে পারি।

হাসপাতাল সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল্লাহ বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসকদের দেখা মেলে না। ডাক্তার সংকটে উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, উপজেলায় ৪টি ইউনিয়ন রয়েছে। দুইটি ইউনিয়নই পদ্মা নদী বেষ্টিত। চরাঞ্চলের মানুষ অনেক কষ্ট করে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে, কিন্তু ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা না নিয়েই তাদের ফিরে যেতে হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জব্বার বেপারী বলেন, প্রতিদিন সকালে শুধু একজন ডাক্তার ওয়ার্ডে এসে ঘুরে যান। এছাড়া অন্য কোনো ডাক্তারদের আমরা দেখি নাই। এ হাসপাতালে জ্বর, ব্যথা, গ্যাস্ট্রিকসহ সাধারণ রোগীরাই চিকিৎসা নিতে আসেন। ডাক্তার সংকটে মরণঘাতি কোনো রোগের চিকিৎসা সেবা এ হাসপাতালে দেয়া হয় না।

চরভদ্রাসন উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মুসা বলেন, হাসপাতালে ডাক্তার না থাকার বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জন মহোদয়কে বার বার অবগত করেছি। এমনকি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সভায় হাসপাতালের সমস্যাগুলো তুলে ধরেছি, কিন্তু সমাধান পাচ্ছি না।

বিএ-১৭/২৫-০৯ (আঞ্চলিক ডেস্ক)