ঘুষ চাওয়ায় ডিসিসহ ১৬ জনের নামে মামলা

৫ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ায় কক্সবাজারের ডিসিসহ ১৬ জনের নামে মামলা করেছেন কেফায়েতুল ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগী । বুধবার কক্সবাজার আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে তিনি এ মামলাটি করেন ।

কেফায়েতুল ইসলাম মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি সিকদার পাড়া এলাকার মৃত ডা. আমান উল্লাহর ছেলে। মামলা নং-২৫/২০১৯।

এতে আসামীরা হলেন- কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসার, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহমদ, অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. মোমিনুল হক, অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা দেবতোষ চক্রবর্তী, কানুনগো মিন কান্তি চাকমা,

জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সার্ভেয়ার কেশব লাল দাস, সার্ভেয়ার ইব্রাহিম, সার্ভেয়ার সিরাজুল হয়দার, সার্ভেয়ার আবুল খায়ের এবং মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি লাইল্যাঘোনার ইসলাম মিয়ার ছেলে অলি আহমদ,

মো. সেলিম প্রকাশ সেলিম উদ্দিনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, মাতারবাড়ি এলাকার ইসলাম মিয়ার ছেলে জামাল উদ্দিন, মেয়ে তাহেরা বেগম, আলী আসকরের মেয়ে রোমেনা আফরোজ এবং মগডেইল এলাকার আবু ছালেক।

মামলার এজাহারে বাদী কেফায়েতুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন, মাতারবাড়ি মৌজায় ৩ দশমিক ৭৬ একর জমির বিপরীতে ক্ষতিপূরণ পেতে রোয়েদাদ ১৩৭ মূলে তাকে ৭ ধারায় নোটিশ দেয়া হয়। সেই অনুসারে গত ১৬ এপ্রিল এবং ২০ এপ্রিল বেলা ১১টায় মামলার ৩নং আসামি ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহমদের কক্ষে যান ভুক্তভোগী।

এ সময় ১নং আসামি জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনসহ অপর আসামিদের যোগসাজশে ৩নং আসামি তাকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিতে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। বাদী পক্ষ নগদ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। বাকি সাড়ে চার লাখ টাকা সাতদিনের মধ্যে দিলে ক্ষতিপূরণের প্রাপ্য টাকার চেক প্রদানের আশ্বাস দেন মওদুদ আহমদ।

কিন্তু পরবর্তীতে আসামিরা পরস্পরের সহযোগিতা ও যোগসাজশে ৩৫ শতাংশ ঘুষ নিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যা কাগজপত্র তৈরি করে ১১নং আসামি ইসলাম মিয়ার ছেলে অলি আহমদসহ মো. সেলিম প্রকাশ সেলিম উদ্দিনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, মাতারবাড়ি এলাকার ইসলাম মিয়ার ছেলে জামাল উদ্দিন,

মেয়ে তাহেরা বেগম, আলী আসকরের মেয়ে রোমেনা আফরোজ এবং মগডেইল এলাকার আবু ছালেককে ১৯ লাখ টাকা দিয়ে দেয়। অথচ এসব আসামির জমি ওই অধিগ্রহণে পড়েনি। ঘুষ নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়ায় ক্ষতিপূরণের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বাদী।

কেফায়েতুল ইসলাম বলেন, সরকারি টাকা হরিলুট ও আত্মসাতের জন্য দুর্নীতি, প্রতারণা, জালিয়াতি ও ক্ষমতা অপব্যবহার করেছেন মামলার আসামিরা। ৩৫ শতাংশ ঘুষ নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি করেছেন তারা।

বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, সরকারি টাকা এভাবে আত্মসাৎ করাটা দুঃখজনক। সরকার যেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে সেখানে ক্ষতিপূরণ নিয়ে কক্সবাজারে দুর্নীতির বীজ বুনা হচ্ছে অবিরাম। আদালত আমাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন। আশা করি আমরা ন্যায়বিচার পাব।

এদিকে, আদালতে মামলা দায়েরের কথা প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বিষয়টি মীমাংসা করতে তদবির শুরু করেছেন বলেও দাবি করেছেন আইনজীবী জাকারিয়া।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, মামলার বিষয়টি জেনেছি। তবে অভিযোগের বিষয়ে জানি না। উল্লেখ করা অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মামলার কপি আনতে বলেছি। যেহেতু আমার নিয়ন্ত্রণাধীন অফিস, তাই আমাকেও দায়ী করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনা সত্য হয়ে থাকলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, এর আগে জমি অধিগ্রহণের টাকা নয়-ছয় করার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাফর আলমসহ সার্ভেয়ার মিলে বেশ কয়েকজন কারাভোগ শেষে সাময়িক বরখাস্ত হয়ে আছেন। এর রেশ না কাটতেই আবারও জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠল।

বিএ-০৬/২৩-১০ (আঞ্চলিক ডেস্ক)