ত্রিপুরার নতুন মুখ্যমন্ত্রীর পৈতৃক ভিটা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়

ত্রিপুরার নতুন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার পৈতৃক ভিটা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কাজীপাড়া এলাকায় বইছে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। শহরের কাজীপাড়ার পুকুরপাড়ে মুখ্যমন্ত্রীর পিতা মাখন লাল সাহার পৈতৃক বাড়ি। এ বাড়িতে বসবাসরত বাসিন্দারা আনন্দের পাশাপাশি আবেগও প্রকাশ করেন।

বাড়িটিতে মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার বা আত্মীয়দের কেউ থাকেন না। ভারতভাগের আগেই মুখ্যমন্ত্রীর পিতা মাখন লালের বন্ধু আগরতলার নূর মিয়া মালদারের সঙ্গে বিনিময় করে আগরতলায় চলে যান। এমনটিই জানিয়েছেন নূর মিয়ার ছেলে শরিফুল ইসলাম মালদার।

বাড়িটির সেদিনের পুরোনো ঘরটি এখনো রয়েছে। তবে এতে এখন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। বাড়ির উঠান ও বাগান সবখানেই বসতঘর। সম্মুখভাগে দোকান। ওপর থেকে বাড়ির পুরোনো ঘরটি দেখিয়ে দিয়েছেন কাজিপাড়া পুকুরপাড়ের বাসিন্দা রাজিব সাহা টিংকু।

পাড়ার প্রবীণ ব্যক্তি ব্যবসায়ী রমন সাহা বলেন, মাখন লাল সাহার বাড়িতে দুর্গাপূজা হতো। তিনি কাজীপাড়ার বাড়ি ছেড়ে আগরতলায় যাওয়ার পরও পূজার সময় আসতেন। পরবর্তী সময়ে তার ছেলেরাও আসতেন। এ বাড়িতে তাদের কেউ না থাকলেও এখনো মাঝে মাঝে স্বজনরা বাড়িটি দেখতে আসেন।

বাড়িটির বর্তমান বাসিন্দা ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম মালদার বলেন, ‘আমার পৈতৃক ভিটা আগরতলা শহরের পুরোনো জেলখানা এলাকায়, যেখানে ত্রিপুরার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার জন্ম। আর মানিক সাহার পৈতৃক এ বাড়িতে আমার জন্ম। এদিক থেকে আমাদের সম্পর্ক আত্মার আত্মীয়ের। আর এ কারণেই ভারত থেকে পাকিস্তান ও পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত আমাদের বাড়ির বিদ্যুৎ বিল মাখন লাল সাহার নামে রয়েছে। বন্ধুর স্মৃতি হিসেবে বিদ্যুৎ বিল তার নামে পরিবর্তন না করার জন্য নির্দেশ ছিল আমার বাবার।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রিয় কাকা মাখন লাল সাহার ছেলে, আমার ভাই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় আমরা বেশ খুশি।’ তার কথায়, ‘কয়েক মাস আগেও মাখন কাকার ছেলেরা আমাদের বাড়ি এসেছিলেন। আমাদের খোঁজ নিয়েছেন। বাবার সময় থেকেই আমাদের মধ্যে আত্মীয়ের সম্পর্ক, যা এখনো আছে।’

স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে শরিফুল জানান, তার বাবা নূর মিয়া মালদার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে পড়তেন। থাকতেন কাজীপাড়া কিবরিয়া মহলে। তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়াও ত্রিপুরার অংশ ছিল। কাজীপাড়ায় থাকাকালে মাখন লাল সাহার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। দেশভাগের সময় পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে থাকে। তখন দুই বন্ধু একে অপরের বাড়ি বিনিময় করেন। সেই থেকে তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাজীপাড়ার বাসিন্দা। আর তাদের আগরতলার বাড়ির বাসিন্দা মাখন লাল সাহা।

বাড়ির বিদ্যুৎ বিলে মাখন লাল সাহার নাম দেখিয়ে শরিফুল বলেন, ‘প্রতি মাসেই বিদ্যুৎ বিল আসে। তখন মাখন কাকাকে স্মরণ করি। সেই সঙ্গে বাবার কথাও স্মরণ হয়। বাবার কথায় বিদ্যুৎ বিল থেকে মাখন লাল সাহার নাম পরিবর্তন হয়নি। আমিও আমার ছেলেদের বলেছি, এই নামটি পরিবর্তন না করতে।’

আবেগাপ্লুত শরিফুল ত্রিপুরার নতুন মুখ্যমন্ত্রীর মানিক সাহার সাফল্য কামনা করেন।

এসএইচ-১৩/১৬/২২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)