নির্বাচনে ১০ হাজারের কম ভোট পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী ৬৭ জন

জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে চলছে এখন চুলচেরা বিশ্লেষন। এবারের নির্বাচনে ২৯৮টি আসনের মধ্যে ৬৭টি আসনে বিজয়ী প্রার্থীর যিনি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তার প্রাপ্ত ভোট ১০ হাজারের কম। এর মধ্যে ২৯টি আসনের প্রার্থীরা ৫ হাজারেরও কম ভোট পেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি হয়েছেন। এদের মধ্যে আবার ৯ জন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দুই হাজারের কম এবং ৪ জন প্রার্থী এক হাজারের কম ভোট পেয়ে পেয়েছেন।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে এই তথ্য উঠে এসেছে।

জামানত হারানো প্রার্থীর সংখ্যা : সারাদেশে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১৬১ জন প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জামানত হারিয়েছেন। এছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকজন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েও জামানত হারিয়েছেন। অর্থাৎ এসব প্রার্থীরা প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোটও পাননি।

এর আগে ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ১৪ জন প্রার্থী জামানত হারিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় প্রত্যেক প্রার্থীকে ২০ হাজার টাকা জমা দিতে হয়। নির্বাচনের সময় কোন প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট না পেলে ওই প্রার্থীর জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়।

জামানত হারানো বিএনপিসহ জোটের সিনিয়র নেতা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোটের জামানত হারানো উল্লেখযোগ্য কয়েকজন সিনিয়র নেতা হলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান। এছাড়াও দলের সিনিয়র নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, জহির উদ্দিন স্বপন, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মজিবর রহমান সরোয়ার, মোহাম্মদ শাহজাহান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি অলি আহমদ, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রমুখ।

সারাদেশের ৮ বিভাগের ফলাফল বিশ্লেষণ : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের আট বিভাগের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ এই পাঁচ বিভাগের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সবচেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধান জয়লাভ করেছেন। এইসব বিভাগে বিজয়ী প্রার্থীদের সঙ্গে তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ভোটের পার্থক্য অনেক বেশি। এসব বিভাগে বিজয়ী প্রার্থী ছাড়া বাকি সব প্রার্থীই তাদের জামানত হারিয়েছেন।

অন্যদিকে সিলেট, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বিজয়ী ও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মাঝে নির্বাচনে কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হয়েছে। তবে তুলনামূলকভাবে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে সিলেট বিভাগের প্রার্থীদের মধ্যে। এই বিভাগে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি কোন প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়নি। অন্যদিকে সবচেয়ে কম প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে বরিশাল বিভাগে। এই বিভাগে ২১ আসনের মধ্যে ২০টি আসনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জোটের প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

কম ভোট পেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি হয়েছেন এমন ১০টি আসন : গোপালগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামীলী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা পেয়েছেন ২ লাখ ২৯ হাজার ৫২৯ টি ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির এসএম জিলানী পেয়েছেন ১২৩ ভোট। মাদারীপুর-১ আওয়ামীলীগের নূর-ই-আলম চৌধুরী পেয়েছেন ২ লাখ ২৭ হাজার ৩৯৩ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলনের মো. জাফর আহমেদ পেয়েছেন ৪৫২ ভোট। গোপালগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম পেয়েছেন ২ লাখ ৮১ হাজার ৯০৯ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলনের তসলিম শিকদার পেয়েছেন ৬০৮ ভোট।

গোলাপগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের ফারুক খান পেয়েছেন ৩ লাখ ৩ হাজার ১৬২ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলনের মিজানুর রহমান পেয়েছেন ৭০২ ভোট। সিরাজগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের মো. নাসিম পেয়েছেন ৩ লাখ ২৪ হাজার ৪২৪ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির রুমানা মোরশেদ পেয়েছেন ১ হাজার ১১৮ ভোট। কুমিল্লা-১১ আসনে মো. মুজিবর হক পেয়েছেন ২ লাখ ৮২ হাজার ৩ ভোট, বিএনপির আবদুল্লাহ আবু তাহের ১ হাজার ১৩৩ ভোট, বরিশাল-১ আসনে আওয়ামী লীগের আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৫০২ ভোট। নিকটতম বিএনপির জহির উদ্দিন স্বপন পেয়েছেন ১ হাজার ৩০৫ ভোট।

এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আওয়ামী লীগের এবিএম তাজুল ইসলাম পেয়েছেন ২ লাখ ৭৮ ভোট, নিকটতম বিএনপির আব্দুল খালেক পেয়েছেন ১ হাজার ৩২৯ ভোট। শরীয়তপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের ইকবাল হোসেন পেয়েছেন ২ লাখ ৭২ হাজার ৯৩৯ ভোট। নিকটতম ইসলামী আন্দোলনের মো. তোফায়েল আহমেদ পেয়েছেন ১ হাজার ৪২৭ ভোট। জামালপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মুরাদ হাসান পেয়েছেন ২ লাখ ১৭ হাজার ১৯৮ ভোট, নিকটতম জাপার মুখলেছুর রহমান পেয়েছেন ১ হাজার ৫৯৩ ভোট।

চট্টগ্রাম বিভাগ : চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৮টি আসনের মধ্যে ৩৮টি আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন। এই ৫৮টি আসনের মধ্যে ১৩টি আসনে বিজয়ী প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ১০ হাজারের কম। এর মধ্যে আবার ৯টি আসনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ভোট ৫ হাজারের কম।

ঢাকা বিভাগ : ঢাকা বিভাগের ৭০টি আসনের মধ্যে ৩৪টি আসনে ধানের শীষে প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন। এই ৭০টি আসনের মধ্যে ১৭টি আসনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ১০ হাজারের কম। এর মধ্যে আবার ১০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৫ হাজারের কম।

বরিশাল বিভাগ : বরিশাল বিভাগের ২১টি আসনের মধ্যে ২০টি আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন। ২১টি আসনের ১৪টিতে বিজয়ী প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ১০ হাজারের কম। ৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৫ হাজারের কম ভোট পেয়েছেন ।

খুলনা বিভাগ : খুলনা বিভাগের ৩৬টি আসনের মধ্যে ৩২টি আসনে ধানের শীষের প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন। এই ৩৬ টি আসনের মধ্যে ১১টি আসনে বিজয়ী প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ১০ হাজারের কম। আবার ৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৫ হাজারের কম ভোট পেয়েছেন।

রংপুর বিভাগ : রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনের মধ্যে তিনটি আসনে ধানের শীষের প্রার্থীর জামানত হারিয়েছেন। বাকি ৩০টি আসনের মধ্যে ১টিতে বিএনপি প্রার্থী বিজযী হয়েছেন।৭টিতে ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা ১ লাখের বেশি ভোট পেয়েছেন। এছাড়াও ১৪টি আসনে ধানের শীষের প্রার্থীরা ৫০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছেন।

রাজশাহী বিভাগ : রাজশাহী বিভাগের ৩৯টি আসনের মধ্যে ১৫টি আসনে ধানের শীষের প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন। এই ৩৯ টি আসনের মধ্যে ৪টি আসনে বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। বাকি ৩৫টি আসনের মধ্যে ৬টি আসনে ১ লাখের বেশি এবং ৬টি আসনে ৫০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছেন ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থীরা। রাজশাহী বিভাগের ৫টি আসনে বিজয়ী প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ১০ হাজারের কম। এর মধ্যে আবার ১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৫ হাজারেরও কম।

ময়মনসিংহ বিভাগ : ময়মনসিংহ বিভাগের ২৪টি আসনের মধ্যে ১৯টি আসনে ধানের শীষের প্রার্থীর জামানত হারিয়েছেন। এই বিভাগের ২৪টি আসনের মধ্যে ৬টি আসনে আসনে বিজয়ী প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ১০ হাজারের কম, আবার ৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৫ হাজারেরও কম ভোট পেয়েছেন।

সিলেট বিভাগ : সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের কোন প্রার্থী জামানত হারাননি। ২টি আসনে বিজয়ী হয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা।সিলেটের ১৯টি আসনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ৪৬ হাজার থেকে ১ লাখ ২৩ হাজার পর্যন্ত ভোট পেয়েছেন।

উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় বাকি ২৯৮ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি, জাতীয় পার্টি ২২টি, বিএনপি ৫টি, গণফোরাম ২টি, বিকল্প ধারা ২টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ২টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টি, তরিকত ফেডারেশন ১টি, জেপি ১টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩টি আসন পেয়েছে।

এসএইচ-০৮/০৫/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : সারাবাংলা)