রাজশাহীর সোমা পেলেন জয়ীতা গুনিজন সম্মাননা

ক্যানভাসের রং-রেখার সাথে নারী জীবনের সংগ্রামের ছবি আঁকা পরিসংখ্যান বেড়ে চলার সাথে সাথে অর্জনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজশাহীর পদ্মা পাড়ের মেয়ে নারগিস পারভিন সোমার অর্জনের পালকে যোগ হয়েছে আরো একটি সম্মাননা। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই চিত্রশিল্পীকে ঢাকার আলোকিত জয়ীতার অায়োজনে গুনিজন সম্মাননা হিসেবে দেয়া হয়েছে ড. মো. শহীদুল্লাহ এ্যাওয়ার্ড। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সারাদেশের ৫ জনকে এ বছর গুনিজন সম্মাননা প্রদান করা হয়। চিত্রশিল্পী হিসেবে রাজশাহী চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক সোমাকে দেয়া হয়েছে এই সম্মাননা।

ষড়ং আর্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সোমা চিত্রকর্ম দেশ মাড়িয়ে পাড়ি জমিয়েছে বিদেশেও। হয়ে উঠেছেন নারীর জীবন সংগ্রামের চিত্রের এক ফেরিওয়ালা। যা কেবল রাজশাহীর নয় দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছেন। তাইত ছবির জগতেই নিজেকে ডুবিয়ে রাখেন সর্বক্ষন। নিজের আঁকা ছবির মাধ্যমে নারী সমাজকে সচেতনতার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়াস নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য। আর তাইতো একের পর এক সাফল্য অর্জন করছেন।

মূলত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রদর্শনীতে বেস্ট নিরিখা পুরস্কার দিয়ে তার অর্জনের যাত্রা শুরু হয়। এরপর দেশের বাইরে প্রথম জাপানে তারপর নেপাল, ভারতের বিভিন্ন জায়গাতে। ২০১৬ সালে জাপানে গ্রন্ড হার্ড অ্যাওয়ার্ড। ২০১৭ সালে ভারতের কেরালার দি মায়েষ্ট্র অ্যাওয়ার্ড, দিল্লিতে গান্ধী আর্ট গ্যালারির বেস্ট পেইন্টিং অ্যাওয়ার্ড, আহমেদাবাদে ললিত কলা একাডেমির অ্যাওয়ার্ড।

২০১৮ সালে ভারতের সিমলায় ও চন্ডিগড়ে বেস্ট পেইন্টিং অ্যাওয়ার্ড, দিল্লিতে কালাকার ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড ও অগ্নিপথ বর্ষসেরা অ্যাওয়ার্ড এবং নেপালে বেস্ট পেইন্টিং অ্যাওয়ার্ড অর্জন। মোট ১৫ টি এ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন এ পর্যন্ত। যার মাঝে ১২টি রয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। বাকি তিনটি দেশে। সর্বশেষ অর্জন ৩০ সেপ্টেম্বর গুনিজন সম্মাননা দেয়া হয়েছে জয়ীতা এ্যাওয়ার্ড। ঢাকায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে এই সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়।

সোমা বলেন, গুনিজন হিসেবে তাঁকে ডঃ মোঃ শহীদুল্লাহ এ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। যেটা তাঁর জন্য অনেক বড় পাওয়া। শিক্ষা জীবনে নিরিক্ষাধর্মী এ্যাওয়ার্ড পাবার পর তাঁর মনে হয়েছিল হয়ত কিছু করতে পারবেন জীবনে রঙ তুলি দিয়ে। এর পর আর কোন এ্যাওয়ার্ড দেশে পাননি। কারন রাজশাহীতে থাকার কারনে সেখান থেকে ঢাকাতে নিজের অবস্থান করা সহজ ছিলোনা। দেশের বাইরে যখন একের পর এক এ্যাওয়ার্ড পান তখন ভালো লাগে তবে তৃপ্তিটা পাননি কখনো। কিন্ত ডঃ মোঃ শহীদুল্লাহ এ্যাওয়ার্ড পাবার মনে হয়েছে দেশের মানুষের ভালোবাসা আর দোয়া গুনিজন হিসেবে সম্মাননা পাবার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখেছে।

তিনি বলেন, এ্যাওয়ার্ড মানে কাজের প্রাপ্তি। আর প্রাপ্তি মানে উৎসাহ। তাই কাজের সফল থেকে আরো সফলতা আনতে এ্যায়ার্ডের গুরুত্ব আছে। কারন সমাজে অনেক মানুষ আছেন সঠিক সময়ে তাদের কাজের স্বীকৃতি না পেয়ে হতাশ হয়ে তারা হারিয়ে যান।
রাজশাহী চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, তাঁর এটা ভেবে ভালো লাগে রাজশাহী থেকে এই এ্যাওয়ার্ডটা অর্জন করেছেন। তাকে দেখে হয়ত নিজ শহরের অনেক মেয়ে তাদের নিজেদের প্রতিভার আলো বিকাশিত করতে উৎসাহিত হবে।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই চিত্রশিল্পী প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডঃ সেলিনা পারভীন রিতাসহ ফাউন্ডেশন সকল সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তাঁকে গুনিজন সম্মাননা দেবার জন্য।

উল্লেখ্য, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকি।

এসএইচ-০১/০৯/১৯ (নিজস্ব প্রতিবেদক)