অর্থাভাবে পড়ালেখা না হওয়া সেই আসিফ আইটি সংস্থার মালিক

দারিদ্রতার কষাঘাতে বিশ্বের অনেক শিশুই স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেন না। আর্থিক দুরাবস্থার কারণে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয় ওই শিশুরা।

তেমনই এক অসহায় শিশু ছিলেন শেখ আসিফ। অর্থাভাবে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে পারেননি। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীনই স্কুল ছাড়তে হয় তার। তবে তিনি স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি।

অবাক করা হলেও সত্যিই যে, স্কুল থেকে ঝড়ে পড়া সেই ছেলেটি আজ লন্ডনের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার মালিক। তার অধীনে কাজ করেন বহু উচ্চশিক্ষিত কর্মী। তবে তার চলার পথ খুব বেশি মসৃণ ছিলো না।

জম্মু-কাশ্মীরের বাতামালু এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ আসিফ। চার ভাইবোনের মধ্যে আসিফ ছিলেন বড়। তার পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তার বাবা। পরিবারের বড় হওয়ার দরুন আসিফ বাবার সাহায্যে স্কুল থেকে ঝড়ে পড়েন।

আসিফের বাবা জম্মু-কাশ্মীর পুলিশে কর্মরত থাকলেও তার একার উপার্জনে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই বাবাকে সাহায্য করতে পড়ালেখা ছেড়ে দেন তিনি। যদিও আসিফের ইচ্ছা ছিল তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করার।

তবে তা আর হয়ে ওঠেনি। তবে স্কুল ছাড়ার বেশ কিছুদিন পরে একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাতে কাজে শুরু করেন আসিফ। তখন তার মাসিক রোজগার ছিলো মাত্র দেড় হাজার টাকা। আর আজ তিনি কোটি কোটি টাকার সংস্থার মালিক।

৬ বছর তিনি সেখানেই কাজ করেন। ২০১৫ সালের দিকে আসিফ নিজেই একটি সংস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। ২০১৬ সালে অন্য একটি সংস্থায় কাজের সুযোগ পান আসিফ।

সেই সংস্থায় গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে যোগ দেন আসিফ। এর পরবর্তী ৬ মাস সেখানে কাজ করেন আসিফ। এর কিছুদিন পরই ওই সংস্থা বন্ধ হয়ে যায়।

আসিফ তখন কী করবেন ভাবতেও পারছিলেন না। দিনরাত নতুন চাকরির সন্ধান শুরু করেন। ওই বছরই তাকে লন্ডনে গুগলে কর্মরত এক ব্যক্তি ডেকে পাঠান।

আসিফকে নিজের একটি আইটি ফার্ম গড়ে তোলার পরামর্শ দেন ওই ব্যক্তি। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেন তার শুভাকাঙ্খী।

মাত্র ৩ মাসের মধ্যেই ব্রিটেনে নিজের আইটি ফার্ম খুলে বসেন আসিফ। ওই ব্যক্তির সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসা শুরু করেন তিনি।

তার সংস্থা ওয়েব ডিজাইনিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ শুরু করে।

বর্তমানে লন্ডনের অন্যতম বড় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় পরিণত হয়েছে আসিফের সংস্থা। ম্যাঞ্চেস্টারেও বড় অফিস আছে তার। আসিফ এখন লন্ডনেই বেশি থাকেন। তবে জন্মভূমির প্রতি টান ঠিকই আছে। তাই তো ২০১৮ সালে তিনি কাশ্মীরে ফিরে যান।

সেই থেকে তরুণ প্রজন্মকে তথ্যপ্রযুক্তিতে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে চলছেন আসিফ। অন্তত ৮০০ ছাত্রছাত্রীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করেছেন।

এসএইচ-১৩/২৬/২১ (অনলাইন ডেস্ক)