বাংলাদেশের রফতানি খাত সংকটের মুখে

আর্থিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশের রফতানি খাত।

ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হিসেবে মাদার ভ্যাসেলে পণ্য দিতে যাওয়া শত শত ফিডার ভ্যাসেল আটকে আছে এ বন্দরে। এগুলো থেকে পণ্য খালাস করতে বাড়তি সময় লাগছে ৩-৪ দিন। এর ফলে ইউরোপ ও আমেরিকান ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে সময়মতো তৈরি পোশাক পাঠাতে হিমশিম খাচ্ছেন গার্মেন্টস মালিকরা।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কলম্বো বন্দরে যাওয়া এসব কনটেইনার এক জেটি থেকে অন্য জেটিতে আনানেয়ার জন্য ৫০০-র বেশি লরির প্রয়োজন। কিন্তু জ্বালানি সংকটের মুখে কলম্বো বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন ১০০-র বেশি লরির জোগান দিতে পারছে না। রয়েছে শ্রমিক সংকটসহ নানা জটিলতাও। ফলে এসব ফিডার ভ্যাসেল যেমন সময়মতো কলম্বো বন্দরে কনটেইনার খালাস করতে পারছে না, তেমনি প্রতিনিয়ত ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন বন্দরমুখী মাদার ভ্যাসেল মিস করছেন শিপিং ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘আমাদের শিপিং কার্যকারিতা ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে। এতে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়ছে রফতানি খাতের ওপর।’

মেডিটেরিয়ান শিপিং কোম্পানি লি.-এর হেড অব অপারেশন অ্যান্ড লজিস্টিক আজমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘বন্দর সমস্যার জন্য একেকটি জাহাজকে ডাবল ডিপিং করতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।’

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপ ও আমেরিকায় পণ্য পাঠাতে সিঙ্গাপুর বন্দরের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার কলম্বো এবং মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং ও তাঞ্জুম পালাপাস বন্দরকে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হিসেবে ব্যবহার করে বাংলাদেশ।

এর মধ্যে সিঙ্গাপুর বন্দর ৪০ শতাংশ, পোর্ট কেলাং ১০ শতাংশ, তাঞ্জুম পালাপাস ৫ শতাংশ ব্যবহার হলেও শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর এককভাবেই ৪৫ শতাংশ ব্যবহার করেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।

এ কারণে শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরের স্থবিরতা বাংলাদেশের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশের রফতানির মূল খাত বর্তমানে গার্মেন্টস শিল্প। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রায় ৭০ হাজার এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ৬৯ হাজার টিইউএস গার্মেন্টস পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ।

এমনিতেই নানা জটিলতায় বিদেশে গার্মেন্টস পণ্য পাঠাতে সমস্যায় পড়ছিলেন ব্যবসায়ীরা। এখন নতুন করে কলম্বো বন্দরের জটিলতায় হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

এ ব্যাপারে বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এস এম আবু তৈয়ব বলেন, ‘আমি মনে করি, চলমান সংকটে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। এমনিতেই বায়াররা লিড টাইম নিয়ে সংকটের মধ্যে থাকে, তার ওপর নতুন করে সৃষ্ট এই সমস্যা পোশাক খাতকে বাধার মুখে ফেলবে।’

শিপিং ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, ইউরোপ ও আমেরিকাগামী পণ্যবাহী মাদার ভ্যাসেলগুলো চীনের বিভিন্ন বন্দর থেকে প্রথমে সিঙ্গাপুর বন্দরে আসে। পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর হয়ে পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এ ক্ষেত্রে এসব বন্দর ঘুরে শ্রীলঙ্কা বন্দরে সময় লাগে ৪-৬ দিন। আর এই ৬ দিনের সুবিধা নিতে বাংলাদেশের রফতানিকারকরা সরাসরি শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরকেই প্রাধান্য দেন।

এসএইচ-০৭/০৪/২২ (অনলাইন ডেস্ক, সময়)