পর্তুগালের পক্ষে পেনাল্টি জেতায় রোনালদো ‘টোটাল জিনিয়াস’

বিশ্বকাপে ঘানার বিরুদ্ধে ম্যাচে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো যেভাবে পর্তুগালের জন্য একটি পেনাল্টি পেয়েছিলেন, এজন্যে ফিফা তাকে ‘টোটাল জিনিয়াস’ বলে বর্ণনা করেছে। এই ম্যাচে পর্তুগাল ঘানাকে ৩-২ গোলে হারায়।

এর মধ্যে একটি গোল ছিল সেই পেনাল্টি থেকে রোনালদোর দেয়া।

কিন্তু এই পেনাল্টির সিদ্ধান্ত ঘানার ম্যানেজার ওটো আডোকে সাংঘাতিক ক্ষিপ্ত করে। তিনি বলেছিলেন, এটি আসলে পেনাল্টি পাওয়ার মতো কিছু ছিল না।

কিন্তু দোহায় এক ব্রিফিং এ ফিফার টেকনিক্যাল স্টাডি গ্রুপের (টিএসজি) সদস্য অলিসেহ বলেছেন, পর্তুগালের এই স্ট্রাইকার দিনে দিনে আরও চতুর হয়ে উঠছেন।

টিএসজির নেতৃত্বে আছেন আর্সেনালের সাবেক ম্যানেজার আর্সেন ওয়েঙ্গার। এদের কাজ হচ্ছে প্রতিটি ম্যাচ দেখে সেটার বিশ্লেষণ করা, পারফরমেন্স এবং ট্রেন্ডের নানা রকম তথ্য দেয়া।

এবারের বিশ্বকাপে বিশটির বেশি খেলা এপর্যন্ত হয়েছে, এবং এগুলোতে নয়টি পেনাল্টি দেয়া হয়েছে। চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ স্টেজে যে রেকর্ড ২৪টি পেনাল্টি দেয়া হয়েছিল, এবারও অবস্থা সেদিকেই যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

এই নয়টি পেনাল্টির সাতটি থেকে গোল হয়েছে। তবে কানাডার আলফোনসো ডেভিস এবং পোল্যান্ডের রবার্ট লেওয়ানডোস্কি পেনাল্টি থেকে গোল করতে পারেন নি।

ঘানার বিরুদ্ধে ম্যাচে রোনালদো যখন বল নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তাকে চ্যালেঞ্জ করে ঘানার মোহাম্মদ সালিসু, যিনি সাউদাম্পটন ক্লাবের রক্ষণভাগে খেলেন। কিন্তু রোনালদো মাটিতে পড়ে যান মোহাম্মদ সালিসুর পায়ে বাধা পেয়ে।

তবে বিবিসির রেডিও ফাইভে কথা বলার সময় ইংল্যান্ডের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় ম্যাট আপসন রোনালদোর পড়ে যাওয়াকে ‘ডাইভ’ বলে বর্ণনা করেন। অর্থাৎ রোনালদো নিজেই ইচ্ছে করে পড়ে গিয়েছিলেন।

ঘানার ম্যানেজার এই পেনাল্টির সিদ্ধান্তের পর ক্ষোভে ফুঁসছিলেন। তিনি বলেন, “রেফারি যে পেনাল্টি দিয়েছে সেটি আসলে পেনাল্টি ছিল না। সবাই এটা দেখেছে। কেন পেনাল্টি দেয়া হলো? এটা রোনালদো বলে, নাকি অন্যকিছু?”

তবে নাইজেরিয়ার জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার অলিসেহ, যিনি ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে খেলেছেন, তিনি মনে করেন রোনালদো চাতুর্যের সঙ্গে এই পেনাল্টি অর্জন করেছেন। এই পেনাল্টি থেকে তিনি তার কেরিয়ারের ১১৮তম আন্তর্জাতিক গোলটি করেন।

অলিসেহ বলেন, “হয়তো স্ট্রাইকাররা এখন আরও চতুর হয়ে উঠছেন।”

“রোনালদোর এই পেনাল্টি নিয়ে লোকে যা খুশি বলতে পারে। কিন্তু মোক্ষম মূহুর্তটির জন্য অপেক্ষা করা, বল স্পর্শ করা, তারপর পা দিয়ে এগিয়ে যাওয়া এবং এরপর প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের পায়ে পা লাগা- পুরো ব্যাপারটাই এমনভাবে ঘটেছে যে তাকে ‘টোটাল জিনিয়াস’ বলতেই হচ্ছে।”

“রোনালদো যে আরও চতুর হয়ে উঠছেন, তাকে এটার কৃতিত্ব দেয়া উচিৎ। এগুলো এখন কেন ঘটছে (বেশি পেনাল্টি দেয়া) তার আরেকটা কারণ ভিএআর। রেফারি এখন পুরো ঘটনা তিন-চারবার দেখতে পারেন।”

এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ১৬টি ম্যাচের চারটিতে কোন গোল হয়নি। প্রথম রাউন্ডে গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচে এটাও একটা রেকর্ড।

শুক্রবার হওয়া ইংল্যান্ড বনাম যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচটিও ছিল গোলশূন্য।

বিশ্বকাপে এপর্যন্ত ০-০ গোলে সর্বোচ্চ সাতটি ম্যাচ ড্র হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার।

কিন্তু কাতার বিশ্বকাপে এরকম গোলশূন্য ড্র এরই মধ্যে এই রেকর্ডের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। অথচ শনিবার পর্যন্ত ৬৪টি ম্যাচের মধ্যে খেলা হয়েছে মাত্র ২০টির মতো।

গেলবারের রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচে মাত্র একটি গোলশূন্য ড্র হয়েছিল- ডেনমার্ক বনাম ফ্রান্সের খেলা।

অলিসেহ বলেন, এর কারণ টিমগুলো খুব বেশি ঝুঁকি নিতে চাইছিল না।

“স্পষ্টতই, অনেক টিম বেশ সতর্কতার সঙ্গে খেলতে চাইছে”, বলছিলেন আলবার্তো যাচেরোনি, যিনি এসি মিলানের হয়ে সিরিজ এ জিতেছিলেন। এছাড়া তিনি এশিয়ান কাপ বিজয়ী জাপানি দলের কোচ ছিলেন।

“কিন্তু টুর্নামেন্ট যত আগাবে, আমরা দেখবো দলগুলো আরও সাহসী হয়ে উঠছে”, বলছিলেন তিনি।

শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোতে মোট ৪৯টি গোল হয়েছে। কিন্তু প্রথম রাউন্ডের ১৬টি খেলায় এমন একটি গোলও হয়নি, যেটি গোলবক্সের বাইরে থেকে করা।

তবে ইরানের রুজবেহ চেসমি শুক্রবার প্রথম এই ট্রেন্ড ভাঙ্গেন, তিনি ওয়েলসের বিরুদ্ধে দূর থেকে গোল করেন। পরে সেদিনই নেদারল্যান্ডসের ফরোয়ার্ড কোডি গ্যাকপো একুয়েডরের বিরুদ্ধে একই কায়দায় গোল করে খেলায় সমতা এনেছিলেন।

এবারের বিশ্বকাপের জন্য যে বলটি তৈরি করা হয়েছে সেটির নাম ‘আল রিহলা।’ ফিফা বলছে, বিশ্বকাপের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত যত বল দিয়ে খেলা হয়েছে, তার মধ্যে এই বলটি সবচেয়ে দ্রুত যায়।

ফিফা আরও বলেছে, মাঠে খেলার সময় এই বলটিই সবচেয়ে নির্ভুলভাবে কাজ করে এবং সবচেয়ে বেশি আস্থা রাখা যায়।

টিএসজের সদস্য ফ্যারিড মনড্রাগন ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে কলম্বিয়ার পক্ষে গোল করেছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, “ফুটবলের অনেক উন্নতি করেছে প্রযুক্তি। বল, বুট, গ্লোভস থেকে শুরু করে ডেটা- এই সবকিছুরই উন্নতি হয়েছে প্রযুক্তির কারণে। খেলার উন্নতির জন্যই এগুলো করা হচ্ছে।”

আপনার দলে যদি ভালো শ্যুটার থাকে, তাহলে যে কোন বলই দ্রুত যাবে এবং বিপদজনক হয়ে উঠবে। আমি সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা সবাই এই নতুন বল দিয়ে খেলে স্বস্তি অনুভব করছেন।”

“বল এখন কত দ্রুত ছুটে আসে আমরা গোলকীপাররা সেটা নিয়ে সারাক্ষণ কথা বলছি। কিন্তু সবকিছুই তো করা হচ্ছে খেলার উন্নতির জন্য।”

এসএইচ-২৫/২৭/২২ (স্পোর্টস ডেস্ক)