সরকারি পর্যায়ে চাল-গমের মজুত বেড়েছে তিন গুণ। বর্তমানে চাল ও গম মিলে সরকারিভাবে খাদ্যশস্যের মজুত দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ টনের বেশি। গত বছরের এই সময়ে মজুতের পরিমাণ ছিল মাত্র সোয়া ৫ লাখ টনের কাছাকাছি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাদ্যের মজুত বাড়া ভালো খবর হলেও সংগৃহীত খাদ্য নিয়ে বিপাকে পড়তে পারে খাদ্য বিভাগ।
যদিও খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, চালের মজুত বাড়লেও তাতে সমস্যা নেই। চাল সংরক্ষণে আধুনিকায়নের কারণে মজুত থাকলেও যেমন নষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই, তেমনি ওএমএসসহ মাঠপর্যায়ের বিতরণ বাড়ানোর নানা পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।
চালের মজুত কমানোর ব্যাপারে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, ৬০ লাখ লোককে ১০ টাকা কেজিতে চাল দেওয়া হচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর–তিন মাসে প্রায় ২ লাখ টন চাল প্রয়োজন হবে। গত বছর মজুত কম ছিল। তখন টিআর, কাবিখাকে টাকায় রূপান্তর করে দেওয়া হয়েছিল। এবার টিআর-কাবিখাকে নিয়মমাফিক দেওয়া হবে। আরও ব্যাপকভাবে বাড়ানো হবে ওএমএস।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত দুই মৌসুমে (বোরো ও আমন) সব মিলিয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ লাখ ২৭ হাজার ১৮১ টন চাল সংগ্রহ কম হয়েছে। চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে আমন সংগ্রহ মৌসুমে (২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়া পর্যন্ত) ৩ লাখ টন ধান (আমন মৌসুমে ০.৬৬৪৫৮ হিসাবে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৩৭৪ টন) এবং ৭ লাখ ২০ হাজার টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল খাদ্য বিভাগের। সব মিলিয়ে ৯ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৪ টন সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আমন মৌসুমে চাল সংগ্রহ হয়েছে ৭ লাখ ৬৮ হাজার ১৪১ মেট্রিক টন। হিসাব অনুযায়ী মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ লাখ ৫১ হাজার ২৩৩ টন কম সংগ্রহ হয়েছে। গত বছর চালের এ সংগ্রহ আরও কম হয়েছিল।
গত বোরো মৌসুমেও চাল সংগ্রহ কম হয়েছে। বোরো মৌসুমে (৩১ আগস্ট শেষ হওয়া পর্যন্ত) সাড়ে ৬ লাখ টন ধান ও ১২ লাখ ৩৫ হাজার টন চাল সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল। সব মিলিয়ে বোরো মৌসুমে শূন্য দশমিক ৬৫ হিসাবে সাড়ে ছয় লাখ টন ধানে চার লাখ ২২ হাজার ৫০০ টন চাল ধরে মোট ১৬ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু মোট চাল সংগ্রহ হয়েছে ১৩ লাখ ৮১ হাজার ৫৫২ টন। এতে সদ্য বিদায়ী বোরো মৌসুমে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৯৪৮ টন চাল কম সংগ্রহ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সংগ্রহ কম হলেও আমদানিও হয়েছে সমানতালে। এতে চলতি অর্থবছর চালের আমদানি বেশি হওয়ায় হুহু করে বেড়েছে মজুত।
খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাস ২৩ দিনে (১ জুলাই ২৩ মার্চ পর্যন্ত) মোট ৪০ লাখ ১৬ হাজার ৯০০ মেট্রিন টন খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ৯ লাখ ৫৮ হাজার ৩২০ টন চাল এবং ৩০ লাখ ৫৮ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন গম। একই সময়ে সরকারিভাবে খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৯৪ হাজার ২৯০ মেট্রিক টন। এতে চাল আমদানি হয়েছে ৬ লাখ ৫২ হাজার ৬৬০ মেট্রিক টন এবং গম আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৬৩০ মেট্রিক টন। সব মিলিয়ে বর্তমানে সরকারিভাবে খাদ্যের মজুত দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪ হাজার ৩৭০ মেট্রিক টনে। এর মধ্যে চালের মজুত (ধানসহ) ১৫ লাখ ১ হাজার ৪৮০ মেট্রিক টন এবং গমের মজুত ২ লাখ ৯ হাজার ১৮০ মেট্রিক টন। অথচ গত অর্থবছরের (২০২০-২০২১) একই সময়ে সরকারি খাদ্যশস্যের মজুত ছিল ৫ লাখ ২৭ হাজার ৬১০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চালের মজুত (ধানসহ) ছিল ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন এবং গমের মজুত ছিল মাত্র ৭৫ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ লাখ ১০ হাজার ২৯০ মেট্রিক টন চালের ঋণপত্র খোলা হয়েছে। আগের অর্থবছরের ঋণপত্রসহ এই সময়ে ১০ লাখ ১০ হাজার ৭৮০ টন চালের ঋণপত্র সমাপ্ত হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে ৫০ হাজার ৭০ মেট্রিক টন, আগস্টে ৩ লাখ ৭০০ মেট্রিক টন, সেপ্টেম্বরে ৪ লাখ ৩০ হাজার ২০০ মেট্রিক টন, অক্টোবরে ২৫ হাজার ৮৬০ মেট্রিক টন, নভেম্বরে ৮৪০ মেট্রিক টন, ডিসেম্বরে ১ হাজার ৫৭০ মেট্রিক টন, জানুয়ারিতে ৭২০ মেট্রিক টন এবং ফেব্রুয়ারিতে মাত্র ৩৩০ মেট্রিক টন চালের জন্য ঋণপত্র খুলেছেন ব্যবসায়ীরা।
কৃষি বিপণন অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, রোববার চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সরু চাল ৭০-৭৬ টাকা, মিনিকেট ৬৬-৭২ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৪৮-৫৫ টাকায়, মোটা চাল ৪২-৪৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক মাস আগেও চালের দাম একই ছিল বলে অধিদফতরের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তবে গত বছরের (২০২১ সালের) একই সময়ে মোটা ও মাঝারি মানের চালের দাম কেজিপ্রতি ২-৩ তিন টাকা বেশি থাকলেও সরু চালের দাম কেজিতে ৮-১২ টাকা কম ছিল।
এদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, বাজারে নাজিরশাইল ও মিনিকেট জাতের চাল ৬০-৭০ টাকা, পাইজাম কিংবা লতা জাতের মাঝারি মানের চাল ৫০-৫৬ টাকা এবং স্বর্ণ কিংবা চায়না ইরি জাতের মোটা চাল ৪৫-৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসএইচ-১৬/৩০/২২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)