রাত ৩:২৯
শুক্রবার
৩ রা মে ২০২৪ ইংরেজি
১৯ শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২৪ শে শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী
spot_img

ভাসানচরের রোহিঙ্গারা ফিরতে চান!

বঙ্গোপসাগরের দুর্গম দ্বীপ ভাসানচরে বাংলাদেশ সরকার যে বিশাল শরণার্থী শিবির নির্মাণ করেছে, সেখানে যাওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে এরই মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। অনেকেই সেখান থেকে ফিরে আসতে চাইছেন। সম্প্রতি একদল শরণার্থী সেখানে জীবিকার দাবিতে প্রথমবারের মতো বিক্ষোভ করেছেন। আরেক দল শরণার্থী রেশন নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

হালিমার যখন প্রসব বেদনা উঠলো, তখন রাত প্রায় এগারোটা। বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে নতুন জেগে উঠা দ্বীপটিতে তার মাত্র আগের দিন এসে নেমেছেন তিনি।

“প্রথম যেদিন এই দ্বীপে পা দেই, আমার কেমন যে লেগেছে আপনাকে বলতে পারবো না। এখানে মানুষ নেই, জন নেই। শুধু আমরা,” বলছিলেন তিনি।

সন্ধ্যার পর ভাসানচর যেন এক মৃত-পুরী। তখন পর্যন্ত যে প্রায় সাত হাজার শরণার্থীকে এই দ্বীপে থাকার জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল, রাতে ক্যাম্পে তাদের কোলাহল থেমে যাওয়ার পর নেমে এসেছিল ভুতুড়ে নিস্তব্ধতা।

হালিমা এর আগে আরও দুটি সন্তান জন্ম দেয়ার অভিজ্ঞতা থেকে জানেন প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার পর কী ঘটতে যাচ্ছিল। ভাসানচরে অত রাতে ডাক্তার দূরে থাক, একজন নার্স বা প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য কর্মী খুঁজে পাওয়াও মুশকিল।

“আমার তখন নিজেকে নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছিল। আতংকিত হয়ে আমি আল্লাহকে ডাকছিলাম।”

ক্যাম্পে নিজের রুমের মেঝেতে মাদুর পেতে বিছানা করে তাতে শুয়ে পড়লেন হালিমা। আর তার স্বামী এনায়েত দৌড়ে গেলেন তাদের ক্যাম্পেই এক রোহিঙ্গা নারীর কাছে, যার ধাত্রী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে।

“সন্তান হতে সাহায্য করার কেউ না থাকলে আল্লাহ তাকে সন্তান দেবেন না, এমন কথা তো তিনি বলেননি,” বলছিলেন হালিমা। “আল্লাহর হুকুম ছিল, তাই আমার বাচ্চা হয়ে গেল। আমার ভাগ্য ভালো।”

হালিমার ভাগ্য আসলেই ভালো। সেই রোহিঙ্গা ধাত্রী আরও তিন নারীকে সাথে নিয়ে হালিমার সন্তান প্রসবে সাহায্য করলেন।

এটি ছিল ভাসানচরের মাটিতে জন্ম নেয়া প্রথম শিশুদের একটি।

এখানে আসার আগে হালিমা বেগম ছিলেন কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং ক্যাম্পে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। ২০১৭ সালে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এক নৃশংস অভিযান শুরুর পর যে প্রায় দশ লাখ শরণার্থী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে, তাদের বেশিরভাগকেই আশ্রয় দেয়া হয়েছে এই শিবিরে।

গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যেদিন ভাসানচরের উদ্দেশে হালিমা বেগম, তার স্বামী এবং দুই সন্তানকে গাড়িতে তোলা হয়, তার দুদিন আগেও তিনি জানতেন না, তাকে এখানে আনা হবে।

“আমার স্বামী আমাকে না জানিয়ে ভাসানচর যাওয়ার জন্য গোপনে নাম লিখিয়ে এসেছিল,” বলছিলেন তিনি। “তার দুদিন পরই আমাদের এখানে আনার জন্য গাড়িতে তোলা হয়।”

যে কোন সময় প্রসব বেদনা উঠতে পারে এমন এক গর্ভবতী এক নারীর জন্য এটি ছিল এক কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা। তাদের প্রথম বাসে করে নেয়া হয় চট্টগ্রামে। পরদিন সকাল দশটায় তাদের তোলা হয় একটি জাহাজে। ডিসেম্বরের ৪ তারিখে তিনটি জাহাজে দেড় হাজারের বেশি রোহিঙ্গা এসে পৌঁছান ভাসানচরে।

যাত্রাপথে গাড়িতে এবং জাহাজে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন হালিমা। প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, তার সঙ্গে বমি শুরু হলো । বমি থামাতে জাহাজের কর্মীরা তাকে ট্যাবলেট এনে দিলেন।

শেষ পর্যন্ত তাদের জাহাজ এসে ভিড়লো ভাসানচরে।

হালিমার ক্ষেত্রে ভাসানচরে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন তার স্বামী, এনায়েত।

তার স্ত্রীর গর্ভাবস্থায় কী ভেবে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন?

“আমাদের বলা হয়েছিল পরিবার পিছু আড়াই কানি (এক একর) জমি দেবে, চাষবাস করে জীবন চলবে। এক জোড়া গরু-মহিষ দেবে। যতদিন চাষবাস করতে না পারছি, ততদিন সরকার খাওয়াবে। তারপর বলেছিল ঋণ দেবে, যাতে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারে।”

এনায়েতের ভাষ্য অনুযায়ী ক্যাম্পের দুজন মাঝি (রোহিঙ্গাদের দলনেতা) তাকে প্রথম ভাসানচরে আসার প্রস্তাব দেয়। তারাই এসব কথা জানিয়েছিল।

“ওরা আমাদের বলে, আমাদের কথা তোমাদের বিশ্বাস না হলে উখিয়ায় আমাদের মিটিং এ আসো। উখিয়ার মিটিং এ গেলাম। সেখানে সরকারের মোট তিনজন লোক ছিল। মাঝিরা আমাদের যা যা বলেছিল, ওরাও সেটাই বললো। আমরা এক সঙ্গে দশজন লোক সেখানে গিয়েছিলাম। তার মধ্যে আটজন ভাসানচরে আসার জন্য নাম লেখাই, দুই জন রাজী হয়নি।”

“আমার স্ত্রীর যে বাচ্চা হবে, সেটা সরকারি লোকজন জানতো। আমার স্ত্রীর অবস্থা জেনে ওরা বলেছিল, কোন সমস্যা নেই। তাকে আমরা আরামে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেব।”

সেই যাত্রায় হালিমা একা নন, তার মতোই এরকম আরও অন্তত তিনজন অন্তঃসত্ত্বা নারীকেও ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তার স্বামী। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এদের মধ্যে একজনের শারীরিক অবস্থা এতটাই গুরুতর ছিল যে, তাকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত নেয়া হয়েছিল একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে।

ভাসানচরের এই শরণার্থী শিবির শুরু থেকেই এক বিতর্কিত প্রকল্প। বাংলাদেশ সরকার যখন কক্সবাজারের শিবিরগুলো থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে আসার জন্য পরিকল্পনা নিয়েছিল, তখন তার বিরোধিতা করেছিল জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা।

তাদের মূল আপত্তি এই দ্বীপ কতটা মানব বসতির উপযোগী তা নিয়ে। ভাসানচর জেগে উঠেছে মাত্র গত দেড় দশকে, সেখানে বাংলাদেশ সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে এক লাখ শরণার্থীর জন্য বিরাট স্থাপনা গড়ে তোলার আগে পর্যন্ত কোন মানববসতিই ছিল না।

বঙ্গোপসাগরের যে স্থানে এই দ্বীপটি, সেখানে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস বা বন্যা থেকে শরণার্থীরা কতটা নিরাপদ সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

কিন্তু তারপরও সরকার গত বছরের মে মাস হতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তর শুরু করে। শরণার্থীদের জন্য এই আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের তত্ত্বাবধান করেছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কমোডোর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উদ্বেগের জবাবে তিনি বলেন, “ভাসানচরে সাইক্লোনের মতো বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যেরকম ভালো ব্যবস্থা আছে, আশে-পাশের কোন দ্বীপেই সেরকম ব্যবস্থা নেই। হাতিয়া, সন্দ্বীপের মানুষকেও আশ্রয় দেয়ার ক্ষমতা আছে আমাদের, যেখানে এক লাখ বিশ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে।”

গত বর্ষা মওসুমের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, “ক্যাম্পের স্থাপনা ঘিরে যে নয় ফুট উচ্চতার বাঁধ, সেখানে চার পাঁচ-ফুট উচ্চতা পর্যন্ত পানি উঠেছিল। আমাদের কোন অসুবিধা হয়নি।”

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ আরও কিছু মানবাধিকার সংস্থা দাবি করেছিল, অনেক শরণার্থীকে তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে এই শিবিরে নেয়া হয়েছে।

তবে প্রকল্প পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী তা অস্বীকার করে বলেন, শরণার্থীরা সবাই নিজের ইচ্ছায় এসেছে। তিনি দাবি করেন, আরও বহু শরণার্থী ভাসানচরে আসার জন্য স্বেচ্ছায় নাম লেখাচ্ছে।

সরকারের তরফ থেকে ভাসানচরের শরণার্থীদের জীবনের যে ছবি তুলে ধরা হয়, সেটা সেখানে গিয়ে স্বাধীনভাবে যাচাই করার কোন সুযোগ এখনো পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা বা মানবাধিকার কর্মীরা পাননি।

তবে এক সপ্তাহ ধরে ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি যে চিত্র পেয়েছে তা বহুলাংশেই সরকারের দাবির বিপরীত। রোহিঙ্গারা বলেছেন:

ক্যাম্পের বাসিন্দাদের মধ্যে নানা কারণে অসন্তোষ বাড়ছে, বিভিন্ন দাবিতে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ভাসান চরে শ‌’খানেক রোহিঙ্গা প্রথম কোন বিক্ষোভ করেছেন।

রেশন বিতরণে অনিয়মের প্রতিবাদেও কিছু শরণার্থী সম্প্রতি রেশন নিতে অস্বীকৃতি জানান

জীবিকার ব্যবস্থা করা হবে বলে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের এই দ্বীপে আনা হয়েছিল, তার কিছুই রক্ষা করা হয়নি।

সেখানে তারা আর থাকতে চান না, সুযোগ পেলে আগের জায়গায় ফিরে যেতে চান।

অনেকে তাদের পরিবারের বাকী সদস্যদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন, জীবনে আর কখনো তারা এক হতে পারবেন, এমন সম্ভাবনা তারা দেখছেন না।

দ্বীপটিতে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েছেন অসুস্থ শরণার্থীরা। তাদের চিকিৎসা এবং ঔষধ-পথ্যের ন্যূনতম সুযোগও সেখানে নেই বলে জানিয়েছেন তারা।

শরণার্থীদের মধ্যে ভাসান চরের পরিস্থিতি নিয়ে যে ক্ষোভ বাড়ছে তার প্রথম প্রকাশ দেখা গেছে দু সপ্তাহ আগে।

একজন শরণার্থী জানিয়েছেন, প্রতি মাসের জন্য নির্ধারিত রেশনে যে পরিমাণ খাবার দাবার দেয়ার কথা ছিল, সেদিন তার চেয়ে কম দেয়ায় কিছু মানুষ এর প্রতিবাদ জানায়।

“রেশন নিয়েই গণ্ডগোল হয়েছে। প্রথম দিচ্ছিল ১৩ কেজি করে চাল। এখন দিচ্ছে ৮ কেজি করে। এটা নিয়ে গণ্ডগোল। কিছু লোক বলেছে, আমরা রেশন খাব না, দরকার হলে উপোষ থাকবো। এরপর ওরা রেশন না নিয়ে চলে এসেছে।”

এ ঘটনার কয়েকদিন পর ভাসান চরে প্রায় শখানেক শরণার্থী আরেকটি প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করার দাবিতে। বিক্ষোভের একটি ভিডিও চিত্র বিবিসির হাতে এসেছে, যাতে দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গা নারী এবং পুরুষরা উত্তেজিত ভঙ্গীতে কোথাও যাচ্ছেন। তাদের কয়েক জনের হাতে লাঠি। তাদের সঙ্গে অনেক শিশু কিশোরও রয়েছে। তবে নিরপেক্ষভাবে এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

শরণার্থীদের অভিযোগ, সরকারের তরফ থেকে রেশনের নামে যে চাল-ডাল-তেল-লবণ দেয়া হয়, কেবল সেটি খেয়ে বাঁচা যায় না। তাদের কাঁচা তরিতরকারি, মাছ-মাংসের দরকার হয়। সংসারে আরও টুকি-টাকি অনেক কিছু কিনতে হয়। তার জন্য টাকা লাগে। কিন্তু সেখানে তাদের আয়-উপার্জনের কোন ব্যবস্থাই নেই, যা করে তারা এই অর্থ জোগাড় করতে পারেন।

একজন শরণার্থী বলেন, “আমাদের এখানে আনার সময় মাথাপিছু ৫ হাজার করে টাকা দিয়েছিল। সেই টাকা এখানে প্রথম ধাক্কাতেই ফুরিয়ে গেছে। এটা কেনা লাগছে, ওটা কেনা লাগছে। এখন এখানে কেউ কেউ আন্দোলন করছে, আমাদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করো, নইলে আমাদের ফেরত পাঠাও।”

গত বছরের মে মাসে ভাসানচরে প্রথম যাদের নিয়ে আসা হয়েছিল, তাদের একজন দিলারা। এই রোহিঙ্গা তরুণী তার পরিবারের আরও দুই সদস্যের সঙ্গে সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

কিন্তু প্রায় তিনশো রোহিঙ্গাকে বহনকারী নৌকাটি মালয়েশিয়ায় পৌছাতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। বঙ্গোপসাগর থেকে মে মাসে এই শরণার্থী বোঝাই নৌকাটি উদ্ধারের পর বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখার কথা বলে নিয়ে যায় ভাসানচরে। কিন্তু দিলারার এখন মনে হচ্ছে তাকে যেন এখানে সারাজীবনের মত নির্বাসন দেয়া হয়েছে।

“আমাদের বলেছিল, করোনাভাইরাসের কারণে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য আমাদের এখানে আনা হচ্ছে, ১৪ দিন পর বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু আনার পর থেকে এই ক্যাম্পে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এখান থেকে কোথাও যেতে দিচ্ছে না। তারপর থেকে এখানেই আছি।”

দিলারা আগে থাকতেন কক্সবাজারের বালুখালি ক্যাম্পে। তার বাবা-মা এবং পরিবারের বাকী সদস্যরা সেখানেই আছেন। দিলারা অবিবাহিতা, ক্যাম্পে যে ঘরে তাকে থাকতে দেয়া হয়েছে, সেখানে থাকতে তিনি নিরাপদ বোধ করেন না। বিশেষ করে যখন রাতের অন্ধকার নেমে আসে।

দিলারার মতে, ভাসান চরে এসে তার জীবনটা এমন এক ফাঁদে আটকে পড়েছে, যেখান থেকে মুক্তির কোন উপায় তিনি দেখছেন না।

শরণার্থীরা তাদের সাক্ষাৎকারে ক্যাম্প জীবনের যে চিত্র তুলে ধরেছেন, তাতে বোঝা যায়, সেখানে তাদের জীবন সাংঘাতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত।

হালিমা জানান, “আমরা ক্যাম্পের বাইরে যেতে পারি না, নিষেধ আছে। সাগর তীরে যেতে পারি না। পুলিশ পাহারা দেয়। এখানে কিছু নোয়াখালির মানুষ আছে। ওদের গলায় কার্ড ঝোলানো। যাদের কার্ড আছে তারা যেখানে খুশি যেতে পারে। আমাদের কার্ড নাই, আমরা পারি না।”

আরেকজন শরণার্থী সালাম বলেছেন, “আমার জীবনে এরকম দ্বীপে আমি কোনদিন থাকিনি। এখানে একেবারে নিঝুম জায়গা। কোন আওয়াজ নেই। চারিদিকে রাতে-দিনে পাহারা দেয়। যারা বেপারি, জিনিসপত্র বিক্রি করতে আসে, তাদেরকেও সন্ধ্যার আগে বাইরে চলে যেতে হয়।”

“রাস্তায় মাথায় মাথায় পুলিশ আছে। ওরা রাস্তায় চেয়ার নিয়ে বসে থাকে। আমাদের জিজ্ঞেস করে, আমরা কোথায় যাচ্ছি। আমাদের ভাসান চরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি এখনো দেয়নি।”

ভাসান চরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্য অসন্তোষের খবর সরাসরি অস্বীকার করলেন বাংলাদেশ সরকারের রিফিউজি রিলিফ এন্ড রিপ্যাট্রিয়েশন কমিশনার দফতরের (আরআরআরসি) প্রধান শাহ রেজওয়ান হায়াত। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখাশোনার দায়িত্ব এই সরকারী সংস্থার।

তিনি বলেন, “আমাদের কাছে এমন তথ্য নেই যে তারা অখুশি।”

দশই ফেব্রুয়ারি ভাসান চরে ক্যাম্পের ভেতর শ’খানেক রোহিঙ্গার প্রতিবাদের একটি ভিডিও চিত্র বিবিসির কাছে এসেছে, একথা জানানোর পর তিনি বলেন, “এটা ঠিক বিক্ষোভ নয়। ওরা এসেছিল মাসিক রেশন নেয়ার জন্য। ওরা রেশন নেয়ার জন্য এক সঙ্গেই আসে, গ্রুপ করে। তখন ওরা ওদের জীবিকার বিষয়টি তুলেছিল।”

শরণার্থীদের দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, তারা এমন কোন প্রতিশ্রুতি তাদের দেননি যে যেটা রাখা হয়নি।

”শরণার্থীদের হালচাষের জন্য কৃষি জমি দেয়া হবে, এমন প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়নি। তবে তারা যদি হাঁসমুরগি-গবাদিপশু পালন করতে চায়, সেই সুযোগ আছে। যদি মাছ চাষ করতে চায়, অনেক পুকুর আছে, সেগুলোতে তারা করতে পারবে।”

”কৃষিকাজের জন্য সবাইকে জমি দেয়া হবে, সেটা তো সম্ভব না। তবে তারা যাতে বাগান করতে পারে, সেটার জন্য তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে,” হায়াত বলেন।

তিনি আরও বলেন, শরণার্থীদের জন্য সেখানে লাইভলিহুড প্রোগ্রামের আওতায় কাজের ব্যবস্থা করতে সময় লাগবে। কিছু কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। অনেক দেশি এনজিও সেখানে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়ে আবেদন করেছে।

ভাসান চরে যাওয়ার জন্য শরণার্থীদের পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়ার কথাও অস্বীকার করেন তিনি। ”যে টাকার কথা বলা হচ্ছে সেটা তাদের কিছু কাজের বিনিময়ে মজুরি, এটা সেরকম কিছু। তাদের সেখানে যাওয়ার সময় পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে, এরকম কোন ঘটনা ঘটেনি।”

ভাসান চরে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা না থাকার কথাও তিনি অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, সন্তান জন্ম দেয়ার সময় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের কাছে প্রশিক্ষিত ধাত্রী ছিল। একজনকে বিশেষ ব্যবস্থায় নোয়াখালি সদর হাসপাতালে পর্যন্ত নেয়া হয়েছে।

ভাসানচরে আসা রোহিঙ্গাদের জীবনের আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে পরিবারের বাকী সদস্যদের কাছ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া।

দ্বীপে প্রথম দলে আসা রোহিঙ্গাদের একজন দিলারা বলছেন, ১৪ দিনের কথা বলে এনে তাকে যেন এখানে সারাজীবনের জন্য বন্দী করে ফেলা হয়েছে।

“আমি ভাসান চরে থাকতে চাই না, আগে যেখানে ছিলাম সেখানে যেতে চাই। এখানে থাকতে চাই না বলেই আমার বাবা-মাকে এখানে আনিনি। যদি থাকতে চাইতাম, আমার বাবা-মাকে এখানে চলে আসতে বলতাম। এখানে দরকার হলে আমরা একা একাই বৃদ্ধ হবো, মারা যাব, তারপরও ওদেরকে এখানে আসতে বলবো না।”

হালিমাও তার বাবা-মাকে এই ভাসানচরে আনার বিরোধী ছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে একে একে তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে এখানে চলে আসতে হয়েছে।

সন্তান জন্ম দেয়ার পর যখন তিনি খুবই অসুস্থ, তখন দ্বীপে কোন ঔষধ পথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে কক্সবাজারের কুতুপালং শিবির থেকে তার বড় ভাই সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি ভাসানচরে যাবেন বোনের জন্য ঔষধ-পথ্য নিয়ে। গত সোমবার হালিমার আরও দুই বোনও তাদের পরিবার নিয়ে চলে এসেছেন ভাসানচরে। সাথে বাধ্য হয়ে এসেছেন তাদের বাবা-মা।

সবাইকে কাছে পেয়ে হালিমা খুশি।

“শুধু একটা জিনিসই ভালো লাগে না, এখানে আমাদের কোন আয়-উপাার্জন নেই। আমার স্বামী যদি কোন দিনমজুরি করতে পারতো, কোন কাজ করতে পারতো, কোন চাকুরি পেত, তাহলে এখানে নিশ্চিন্তে থাকতাম। আমার স্বামী কোন কাজ-কর্ম করতে পারছে না, বাচ্চাদের খাওয়াবে কেমন করে, বউ-বাচ্চাকে পালবে কেমন করে?

দ্বীপে আসার পরদিনই হালিমা যে শিশুটির জন্ম দিয়েছিলেন, সেটির বয়স এখন আড়াই মাস। প্রথম দুই সপ্তাহ তিনি বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে পেরেছিলেন, কিন্তু তারপর বুকের দুধ শুকিয়ে গেলে টিনের দুধ খাওয়াতে শুরু করেন।

“বাচ্চাকে প্রথম যেদিন টিনের দুধ খাওয়াই, ওর পেটে অসুখ হয়েছে, বদ হজম হয়েছে। ডাক্তার বলেছে তিন বা ছয় মাসের কম বয়সী বাচ্চার জন্য যে টিনের দুধ, সেটা খাওয়াতে। কিন্তু সেটা এখানে পাওয়া যায় না।”

তার নিজের এবং সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি শঙ্কিত, তবে বেশি ভয় সাইক্লোন নিয়ে।

“আমার সবচেয়ে ভয় ঝড়-তুফান নিয়ে। এরকম জায়গায় আমি কোনদিন থাকিনি।”

“আমাকে যেতে দিলে চলে যাবো। কিন্তু যেতে না দিলে তো যেতে পারবো না। কারণ আমরা তো আসলে এখানে একরকম বন্দী হয়ে আছি, কোনদিকে যেতে পারি না।”

হালিমার স্বামী এনায়েতেরও একই মত।

“কেউ যখন আমার কাছে জানতে চায় এখানে আসবে কীনা, আমি তাদেরকে আসতেও বলি না, নিষেধও করি না। আমি সবাইকে বলি, পুরো পরিবার নিয়ে একটা বিরাট জেলখানায় থাকলে যেরকম জীবন হবে, এখানকার জীবনটা সেরকম।”

এসএইচ-১৬/২৩/২১ (মোয়াজ্জেম হোসেন, বিবিসি)

আওয়ামী লীগ তৃণমূলে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে ?

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে৷ এসবের মাঝে তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলটির নিয়ন্ত্রণ হারানোর ইঙ্গিত দেখছেন বিশ্লেষকরা৷

সাবেক কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন আহমদ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘দীর্ঘদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, স্থানীয় সরকারে কোন একটি নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে বা দলের যে কোনো পর্যায়ে একটি পদ পেলেই সুযোগ সুবিধার রাস্তা প্রশস্ত হয়৷

এখন যারা এই পদে আছেন, অন্যরা মনে করছেন তারাও তো এই পদে যেতে পারেন৷ এই কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে৷ সেই প্রতিযোগিতা সংঘাত থেকে হানাহানিতে রূপ নিচ্ছে৷ পাশাপাশি রাজনৈতিক মাঠে তো বিরোধী দলের শূন্যতা আছে৷ ফলে অর্থশালী হতে তৃণমূল নেতারা প্রতিযোগিতায় নেমেছেন৷ যদিও অর্থশালীদের দাপট শুধু তৃণমূলে নয়, কেন্দ্রেও আমরা দেখি৷ সম্প্রতি দ্য ইকোনোমিস্ট তো লিখেছে, তৃণমূলে আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে যাচ্ছে৷’’

সাম্প্রতিককালে নোয়াখালির কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই মির্জা আবদুল কাদের৷ দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে তার দাবি অনুযায়ী ‘সত্যবচন’ করে আলোচনায় আসেন ৷ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয় তার৷

সেই বিরোধে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে নিজের ভাই ও ভাবির বিরুদ্ধেও বলেছেন৷ নির্বাচনে জয়লাভের পরও বিবাদ থামেনি৷ সর্বশেষ গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন গুলিবিদ্ধ হন৷ তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির৷ সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদে পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে ঘিরে সোমবার বসুরহাটে ১৪৪ ধারা জারি ছিল৷ এর মধ্যেও দুই পক্ষ মাঠে নামার চেষ্টা করে৷ তবে পুলিশের সক্রিয়তার কারণে নতুন করে আর সংঘাত হয়নি৷

নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরও বিবাদের কারণ জানাতে গিয়ে মির্জা আবদুল কাদের বলেন, ‘‘এখন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী দেখছেন, ফলে এ নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না৷ আমি খুবই অসুস্থ, দেড় বছর ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করছি৷ এখন আর এসব নিয়ে নতুন করে কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব সংঘাতে জড়াতে চাই না৷’’

কেন বসুরহাটের নেতাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? এ প্রশ্নের জবাবে নোয়াখালি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ. এইচ. এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম বলেন, ‘‘মির্জা আবদুল কাদেরের মাথা খারাপ হয়ে গেছে৷ তিনি কী বলছেন, নিজেই বুঝতে পারছেন না৷’’ এ. এইচ. এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমের মতে, ‘‘মাথা খারাপ মানুষ কী করে, তিনি নিজেই বুঝতে পারেন না৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে ১৭ মিনিট কথা বলেছি৷ পুরো ঘটনা তাকে জানিয়েছি৷ প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, তিনি সব ঠিক করে দেবেন৷ তাই আমরা তাকে বহিস্কারের উদ্যোগ নিয়েও আর করিনি৷ রবিবারই মির্জা সাহেব আমাকে জানিয়েছেন, তিনি আর ঝামেলা করবেন না৷ অথচ সোমবার তিনি লোকজন নিয়ে মাঠে নেমে পড়লেন৷ মানববন্ধন করলেন৷ তিনি তো এখন ওবায়দুল কাদেরের ফোনই ধরেন না৷ আমাদের সঙ্গেও কথা বলেন না৷ তাহলে আমরা তাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবো?’’

গত জানুয়ারি মাসেও নোয়াখালীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে৷ সদর উপজেলার এওয়াজ বালিয়া ইউনিয়নে চর করমুল্লা বাজারে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ এতে অন্তত ২০ জন আহত হন৷

জানুয়ায়িতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় শহরের ডবলমুরিং থানার ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষে আজগর আলী বাবুল (৫৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়৷ সেখানে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে৷

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷ সর্বশেষ পটুয়াখালির বাউফলে একুশে ফেব্রুয়ারিতে ফুলের তোড়া নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে৷ সেখানেও ২০ জন আহত হয়েছেন৷ তবে চলমান পৌরসভার নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত বেড়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য কারো কারো এত মরিয়া হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে৷ সবাই তো চাইবেন মনোনয়ন পেতে৷ কিন্তু আমরা তৃণমূলে নেতাদের কার্যক্রম কঠোরভাবে মনিটর করছি৷ আসলে বৈশ্বিকভাবে এক ধরনের অস্থিরতা বেড়েছে৷ তার প্রভাব বাংলাদেশেও আছে৷ এই কারণে হয়ত কিছুটা অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে৷ অনেক জায়গায় আমরা কঠোর ব্যবস্থাও নিচ্ছি৷”

তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে কি আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হচ্ছে? তৃণমূলে আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ কি শিথিল হয়েছে? আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শফিক বলেন, “কোনটাই না৷ এখন নির্বাচনের মৌসুম চলছে৷ ফলে মনোনয়নের একটা প্রতিযোগিতা আছে৷ এটাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখি৷ কিন্তু কিছু জায়গায় দুঃখজনক ঘটনাও ঘটেছে৷ সেগুলোতে আমরা শক্তভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি৷ কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাদের কাছে এ ব্যাপারে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে

এসএইচ-১৫/২৩/২১ (সমীর কুমার দে, ডয়চে ভেলে)

উইঘুরদের ওপর চীনের অত্যাচারকে ‘গণহত্যা’ বলছে কানাডা

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুসলিমদের প্রতি দেশটির দমনপীড়ন আচরণকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিহিত করে ভোট দিয়েছে কানাডার হাউজ অফ কমন্স।

মঙ্গলবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গণহত্যার’ স্বীকৃতি প্রস্তাব ২৬৬-০ ভোটে পাস হয়। যেখানে বিরোধী দলের সবাই এবং ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির কিছু অংশ ভোট দেন। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তার মন্ত্রিসভার বেশির ভাগ সদস্য ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে কানাডা উইঘুর মুসলিমদের প্রতি চীনা আচরণকে গণহত্যা বলে স্বীকৃতি দিল।

বিবিসি জানায়, আইনপ্রণেতারা একইসঙ্গে একটি সংশোধনী পাস করেছেন যেখানে ‘চীন সরকার উইঘুর গণহত্যা অব্যাহত রাখলে’ ২০২২ সালের শীতকালীন অলিম্পিক বেইজিং থেকে সরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিকে আহ্বান জানানোর জন্য কানাডা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

তবে জাস্টিন ট্রুডো সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের প্রতি চীনা আচরণকে গণহত্যা বলতে কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিলেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিষয়টি আরও যাচাই-বাছাই করা দরকার বলে জানিয়েছেন তিনি।

ভোটের আগে বিরোধীদলীয় নেতা ইরিন ও’টুল বলেন, এ পদক্ষেপ হলো একটি বার্তা দেওয়া যে, আমরা মানবাধিকার ও মানুষের মর্যাদার পক্ষে দাঁড়াবো এমনকি কিছু অর্থনৈতিক সুযোগ ত্যাগ করে হলেও।

তিনি সম্প্রতি উইঘুরদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিবিসি নিউজকে চীনে নিষিদ্ধ করার কথা উল্লেখ করেন।

তবে কানাডায় চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, পার্লামেন্টের প্রস্তাব চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সামিল। আমরা এটি প্রত্যাখ্যান করছি কারণ এটি সত্যের বিরুদ্ধে। সেখানে গণহত্যার মতো কিছুই ঘটছে না।

এসএইচ-১৪/২৩/২১ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)

ঢাবির হল ১৭ মে’র আগে খুলছে না

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলগুলো পরীক্ষার্থীদের জন্য ১৩ মার্চ খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৭ মে’র আগে খুলবে না।

একইসঙ্গে যেসব বিভাগে পরীক্ষা চলমান তা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হবে।

মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানা যায়, হল খোলার একমাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর জন্য টিকার প্রাথমিক ডোজ নিশ্চিত করা হবে। যেসব বিভাগে পূর্বঘোষিত পরীক্ষা চলমান তা বন্ধ হবে না। তবে নতুন করে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব নবাব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান সভাপতিত্ব করেন।

এসএইচ-১৩/২৩/২১ (শিক্ষা ডেস্ক)

বৃহস্পতিবার আইজিপির সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজির আহমেদের সঙ্গে বৈঠকের সময় পেয়েছে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় আইজিপির কার্যালয়ে বিএনপির প্রতিনিধি দলের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

মঙ্গলবার সকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধি দলে থাকবেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিজন কান্তি সরকার, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) জয়নুল আবেদীন।

বৈঠকে বিএনপির উদ্যোগে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে গৃহীত কর্মসূচির সার্বিক নিরাপত্তা ও সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানান শায়রুল কবির।

এসএইচ-১২/২৩/২১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)

সৌদি নারীরা যোগ দিতে পারবেন সামরিক বাহিনীতে

সৌদি আরবের নারীরা এবার অস্ত্র হাতে নিতে পারবে এবং যোগ দিতে পারবে সেনাবাহিনীতে। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে নারীদের জন্য আরও একটি কর্মক্ষেত্র উন্মুক্ত হলো।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের বরাতে আলজাজিরা জানায়, সৌদি নারীরা এখন থেকে সামরিক বাহিনীর সৈনিক, ল্যান্স কর্পোরাল, কর্পোরাল, সার্জেন্ট এবং স্টাফ সার্জেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবে।

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে ধারাবাহিকভাবে দেশটির নারীদের জন্য কর্মক্ষেত্র উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে।

শপিং মলগুলোতে ক্যাশিয়ার পদে সৌদি নারীদের বসে থাকার দৃশ্য এখন একেবারেই পরিচিত, যেটি আগে শুধু পুরুষদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল। একইভাবে রেস্টুরেন্ট ও কফি শপগুলোতে কাস্টমার সার্ভিসে যুক্ত হয়েছে নারীরা।

নারীরা সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে পারবে এমন প্রথম ঘোষণা এসেছিল ২০১৯ সালে। পরিবারের পুরুষ সদস্যের অনুমতি ছাড়াই নারীরা দেশের বাইরে যেতে পারবে, এমন ঘোষণাও দেওয়া হয় সেবছর। নারীদের ওপর অভিভাবকত্ব নিয়ে এমন কড়াকড়ি তুলে নেওয়ায় ঘরে বাইরে তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছিল সৌদি কর্তৃপক্ষ।

২০১৮ সালে গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া হয় নারীদের। তার আগ পর্যন্ত সৌদি আরব ছিল একমাত্র দেশ, যেখানে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি ছিল না।

আরব নিউজ জানায়, ওজন ও উচ্চতার শর্ত পূরণ করে নারীরা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারবে। তবে অন্তত উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করা লাগবে তাদের। বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করা কোনো নারী এ চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবে না।

২০২০ সালে সৌদি আইন মন্ত্রণালয় ১০০ নারীকে পাবলিক নোটারি হিসেবে নিয়োগ দেয়। চলতি বছর জানুয়ারিতে ঘোষণা দেওয়া হয়, শিগগিরই আদালতে নারী বিচারকও নিয়োগ দেওয়া হবে।

গত ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো নারী বিমানবালা নিয়োগ দেয় সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস। দেশটিতে নারী যাত্রীদের সেবার জন্য ৫০ জন বিমানবালা নিয়োগ করা হয়।

এসএইচ-১১/২৩/২১ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)

সন্তানের মরদেহ কোলে থানায় মা-বাবা!

কুমিল্লায় সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে পেটে লাথি মেরে গর্ভের সন্তান হত্যার অভিযোগ করেছেন সোহেল আরমান ও শিল্পী আরমান নামে এক দম্পতি। বিচার চাইতে মৃত নবজাতককে কোলে নিয়ে দিনভর পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছেন তারা। শেষ পর্যন্ত আদালতে দ্বারস্থ হয় ওই দম্পতি।

পরে কুমিল্লা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলী আদালতের নির্দেশে অবশেষে মৃত নবজাতকের মা শিল্পী আরমান বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লা নগরীর ১৭নং ওয়ার্ডের পাথুরিয়াপাড়া এলাকায়।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ওই দম্পতির পার্শ্ববর্তী বাড়ির বাসিন্দা আপন মামা আবুল কালাম ড্রাইভারের সাথে বসতবড়ির সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে ২১ ফেব্রুয়ারি আবুল কালামের স্ত্রী শাহানা, মেয়ে লিমা ও মেয়ের জামাই এপিকসহ পরিবারের লোকজন ওই গৃহবধূ শিল্পী আরমানকে মারধর করে।

এ সময় তার মামি শাশুড়ি শাহনাজ বেগম ওই গৃহবধূর পেটে লাথি মারলে ওই গৃহবধূর প্রসব বেদনা শুরু হয়। পরে সোমবার সকালে প্রসব বেদনা নিয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হলে একটি শিশু ছেলে সন্তান প্রসব করেন। পরে ২ ঘণ্টার মধ্যে নবজাতক শিশুটি মারা গেলে মৃত নবজাতক সন্তানকে কোলে নিয়ে ওই দম্পতি বিচারের দাবিতে দিনভর সমাজপতিসহ বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে বেড়ায়।

পরে কুমিল্লা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলী আদালতে গিয়ে বিচার আবেদন করলে বিচারক কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানায় মামলার করার নির্দেশ দেয়। সন্ধ্যায় কোতয়ালী মডেল থানায় মারধরের কারণে শিশুটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মারা যায় বলে নবজাতকের মা শিল্পী আরমান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ মৃত নবজাতকের ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহটি মর্গে পাঠায়।

মৃত নবজাতকের সুরতহাল সংগ্রহ করা কোতয়ালী মডেল থানার এস আই মাসুদ জানায়, মৃত্যুর ঘটনায় নবজাতকের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছে। আমরা সুরতহাল সংগ্রহ করেছি। ম

এসএইচ-১০/২৩/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)

রাজশাহীতে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৮

রাজশাহীতে যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত আটজন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহানগরীর সিটিহাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা হতাহতদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে একজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। অন্যরা চিকিৎসা নিচ্ছেন।

রামেক হাসপাতাল পুলিশ বক্স জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তির নাম জামান। তিনি ট্রাকের চালক।

তবে তার ঠিকানা তাৎক্ষনিকভাবে পাওয়া যায়নি। আহতদেরও নাম-ঠিকানা জানাতে পারেনি পুলিশ বক্স।

শাহ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম খান বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি দু’টিকে সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। হতাহত সবাইকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মৃত ব্যক্তির লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এসএইচ-১০/২৩/২১ (নিজস্ব প্রতিবেদক)

ডজন দেশে ফিফটি করে গেইলের বিশ্ব রেকর্ড

করাচি কিংসের বিপক্ষে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে ২৪ বলে ৩৯ রানের ইনিংস খেলে দিয়েছিলেন পূর্বাভাস, যার পূর্ণতা দিয়েছেন ঠিক পরের ম্যাচেই। ধারাবাহিকতা ধরে রেখে সোমবার রাতে লাহোর কালান্দারসের বিপক্ষে ৫টি করে চার-ছয়ের মারে ৬৮ রানের ইনিংস খেলেছেন কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটরসের বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল।

আর এ ফিফটির মাধ্যমে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি দেশে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলার রেকর্ড গড়লেন গেইল। এবার পাকিস্তান নিজেদের মাটিতেই পিএসএল আয়োজন করা রেকর্ডটি গড়তে পেরেছেন দ্য ইউনিভার্স বস। পাকিস্তানসহ এ নিয়ে ১২তম দেশে ফিফটি হাঁকালেন তিনি।

এতদিন ধরে ভারতের হিটম্যানখ্যাত রোহিত শর্মার সঙ্গে সমান ১১টি দেশে ফিফটির রেকর্ড ছিল গেইলের। এখন এটি পুরোপুরি নিজের করে নিলেন গেইল। এছাড়া বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে টেস্ট খেলুড়ে প্রথম দশ দেশে ফিফটির রেকর্ডও গড়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই ফেরিওয়ালা।

কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে গেইলের পঞ্চাশ করা দেশগুলো হলো ইংল্যান্ড (৭), দক্ষিণ আফ্রিকা (৭), ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২০), নিউজিল্যান্ড (১), ভারত (৩৭), অস্ট্রেলিয়া (৭), জিম্বাবুয়ে (৩), বাংলাদেশ (১১), যুক্তরাষ্ট্র (৩), শ্রীলঙ্কা (৩), আরব আমিরাত (৮) ও পাকিস্তান (১)। সবশেষ পাকিস্তানে ফিফটি করেই ডজন মিলিয়েছেন গেইল।

অন্যদিকে রোহিতের সামনে পাকিস্তানে খেলার সুযোগ সুদূর ভবিষ্যতেও আসার সম্ভাবনা নেই। ফলে অন্য কোনো দেশে ফিফটি করে গেইলের পাশে বসতে তাকে। রোহিতের পঞ্চাশ করা দেশগুলো হলো ভারত (৪৪), দক্ষিণ আফ্রিকা (৩), ইংল্যান্ড (২), ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২), শ্রীলঙ্কা (৩), বাংলাদেশ (৩), আরব আমিরাত (৪), অস্ট্রেলিয়া (২), যুক্তরাষ্ট্র (২), আয়ারল্যান্ড (১) ও নিউজিল্যান্ড (৩)।

অবশ্য গেইলের ৬৮ রানের ইনিংসে রেকর্ড গড়ার ম্যাচে জয় পায়নি কোয়েটা। অভিজ্ঞ তারকা হাফিজের তাণ্ডবে ৯ উইকেটের সহজ জয় পেয়েছে লাহোর। টর্নেডো ইনিংসে মাত্র ৩৩ বলে ৫ চার ও ৬ ছয়ের মারে ৭৩ রান করেছেন হাফিজ। আর এর মাধ্যমে হয়েছে আরেকটি অনন্য রেকর্ড।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই প্রথমবারের মতো কোনো ম্যাচে চল্লিশোর্ধ্ব বয়সের দুইজন খেলোয়াড় পঞ্চাশের দেখা পেলেন। সোমবার ম্যাচ খেলতে নামার সময় গেইলের বয়স ৪১ বছর ১৫৪ দিন এবং হাফিজের বয়স ৪০ বছর ১২৮ দিন।

দুইটি অনন্য কীর্তি গড়লেও, দেশের ডাকে এখন পিএসএল ছেড়ে যাচ্ছেন গেইল। আগামী মাসে হতে যাওয়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলতে দেশে ফিরে যাচ্ছেন তিনি। তবে ফিরে আসবেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ভাগে। একই কারণে পিএসএল ছেড়ে যাচ্ছেন রশিদ খানও। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে লম্বা সূচি থাকায় আর ফেরা হবে না রশিদের।

এসএইচ-০৯/২৩/২১ (স্পোর্টস ডেস্ক)

শিশুরা এক বছর ধরে ঘরবন্দি

এক বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বে তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে করোনাভাইরাস। মহামারির এই সময়ে সারাবিশ্বেই নানা ধরনের পরিবর্তন এসেছে। আগের মতো জীবন-যাপন এখন আর স্বাভাবিক গতিতে নেই। সবকিছুতেই চলে এসেছে সীমাবদ্ধতা।

এখন চাইলেই শিশুরা ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে মন খুলে গল্প করতে পারছে না, খেলাধুলা করতে পারছে না। এমনকি স্কুলেও যেতে পারছে না তারা। ফলে তাদের জীবন এখন ঘরবন্দি।

ফিলিপাইনের ছয় বছর বয়সী শিশু অফেলিয়া অ্যাবো। সে প্রায় ১১ মাস ধরে ঘরে বন্দি। প্রতিদিন সকালে তাকে অনলাইন স্কুলে হাজিরা দিতে হয়। বাকি সময়টা তার এটা সেটা খেয়ে বা ঘরের লোকদের সঙ্গে খেলাধুলা করে কেটে যায়।

সে তার মায়ের সঙ্গে খেলে অথবা বাড়ির ছাদে চলে যায়। এসবে তার খুব একটা খারাপ লাগে না। কারণ সারাদিন তার খেলাধুলা করেই কেটে যাচ্ছে। কিন্তু কখনও কখনও এসবে তার একঘেয়েমি চলে আসে। তার খুব ইচ্ছা করে যদি কোনো শপিংমল বা বীচে যেতে পারত!

অফেলিয়ার মতো ১৫ বছরের কম বয়সী আরও প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ শিশু এখন নিজ নিজ ঘরে বন্দি সময় কাটাচ্ছে। করোনা মহামারির বিস্তার ঠেকাতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, শিশুদের বাড়ির বাইরে বের হওয়া নিষেধ। ফলে ২৪ ঘণ্টাই শিশুরা এখন বাড়িতে থাকছে।

করোনা মহামারিতে সবচেয়ে ঝুুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন বয়স্করা। সে কারণে তাদের এখনও ঘরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি মিলছে না। প্রাপ্ত বয়স্ক কর্মজীবীদের জন্য বেশ কিছু বিধি-নিষেধ শিথিল করা হলেও বয়স্ক এবং শিশুদের জন্য নিষেধাজ্ঞা এখনও জারি রয়েছে।

অফেলিয়ার মা ইরিস বলছেন, তার মেয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। তবে তিনি সরকারের নির্দেশনা মেনে নিজের সন্তানের সঠিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন। এই ভাইরাস প্রাণঘাতী। তাই তিনি সরকারের জারি করা বিধি-নিষেধকে যুক্তিসঙ্গত এবং সঠিক বলেই মনে করেন।

গত বছরের আগস্টে দেশটিতে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে। সে সময় প্রতিদিন ৪ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে এই সংখ্যা কিছুটা কমে এসেছে। এখন দৈনিক নতুন সংক্রমণ প্রায় ১ হাজার ৬শ।

শুধুমাত্র ফিলিপাইনেই শিশুরা ঘরবন্দি তা নয়। অনেক দেশই এ বিষয়ে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করছে। স্পেনেও একই ধরনের সতর্কতা গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানেও করোনা মহামারি শুরু পর থেকেই শিশুদের বাড়ির বাইরে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে শিশুদের এভাবে ঘরবন্দি করে রাখার বিষয়ে অনেকেই নেতিবাচক প্রভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। ইউনিভার্সিটি অব ফিলিপাইনের চাইল্ড প্রটেকশন ইউনিটের বার্নাদেতে মাদ্রিদ বলেন, প্রত্যেকেই এটা স্বীকার করেন যে এর ফলে শিশুদের মনো-সামাজিক ক্ষেত্রে খারাপ প্রভাব পরতে পারে।

তবে তিনিসহ বহু চিকিৎসক, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, মহামারি বিশেষজ্ঞ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং বাবা-মায়েরা বিশ্বাস করেন যে, ফিলিপাইনের অনেক পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন আচরণের কারণে বাচ্চাদের বাড়িতে রাখাটা সুবিধার চেয়ে বরং ঝুুঁকিই বেশি হতে পারে।

এখনও পর্যন্ত করোনা মহামারিতে শিশুদের গুরুতর অসুস্থতার খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু তাদেরও আক্রান্ত হওয়া এবং অন্যদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে কিছুটা ঝুঁকি রয়েই যাচ্ছে।

দেশটিতে ১০ শতাংশের বেশি ৬০ ঊর্ধ্ব লোকজন তাদের নাতি-নাতনির সঙ্গে থাকে। তাদের ছেলে-মেয়েরা বেশিরভাগই কাজের জন্য বাড়ি থেকে দূরে অন্য কোথাও বাস করে। ফলে শিশুরা ঘরে থাকলেই বরং তারা আরও বেশি নিরাপদ বোধ করেন।

এসএইচ-০৮/২৩/২১ (অনলাইন ডেস্ক)