কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে তুলবে যেসব স্বাস্থ্যকর পানীয়

কর্মদক্ষতা

ইলেকট্রোলাইট এমনই এক ধরনের খনিজ, যা বৈদ্যুতিক চার্জ উত্পন্ন করে স্নায়ুর সংকেত, পিএইচ ভারসাম্য, পেশি সংকোচন ও হাইড্রেশনসহ আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় ফাংশনগুলো নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

আমাদের শরীর গুরুত্বপূর্ণ কার্যসম্পাদনের জন্য সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ক্লোরাইড ও বাইকার্বোনেটের মতো প্রাথমিক ইলেকট্রোলাইটগুলো ব্যবহার করে। আমাদের রক্ত ও শরীরের অন্যান্য তরলের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় ইলেকট্রোলাইট থাকে।

এ ইলেকট্রোলাইটের স্তর যদি খুব কম বা বেশি হয়ে যায়, তবে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। এছাড়া ঘাম ও অন্যান্য বর্জ্যের মাধ্যমে শরীর থেকে ইলেকট্রোলাইট ক্ষয় হয়।

এজন্য আমাদের খনিজসমৃদ্ধ খাবারের মাধ্যমে সেগুলো পূরণ করা প্রয়োজন। পুষ্টিবিদরা এমনই কিছু খনিজসমৃদ্ধ পানীয়কে চিহ্নিত করেছেন, যেগুলো আমাদের নিয়মিত পান করা জরুরি। চলুন জেনে নিই কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে তুলতে আপনি যেসব পানীয় পান করতে পারেন…

ডাবের পানি

ডাবের পানিতে প্রাকৃতিকভাবে ক্যালরি ও চিনি কম থাকে এবং এটা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো ইলেকট্রোলাইটসমৃদ্ধ। বেশ কয়েক বছর ধরে এটি বাজারে অন্যতম জনপ্রিয় একটি পানীয়। এটা বিশ্বব্যাপী এখন বোতলজাত করেও বিক্রি করা হয়। প্রতি কাপ (২৩৭ মিলি) ডাবের পানিতে ৪৬ ক্যালরি থাকে। এটা সোডা, জুস ও ঐতিহ্যবাহী স্পোর্টস ড্রিংকসের স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে।

এছাড়া ডাবের পানিতে অ্যান্টি-এজিং উপাদান থাকে, যা শরীরে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। সেই সঙ্গে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

দুধ

যখন ইলেকট্রোলাইট পানীয়ের কথা আসে, তখন সবার আগে আসে গরুর দুধের কথা। অন্যান্য নাশতা বা কফির চেয়ে দুধ অনেক বেশি ব্যবহার করা যেতে পারে। ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের মতো ইলেকট্রোলাইটসমৃদ্ধ ছাড়াও দুধে কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনের স্বাস্থ্যকর সমন্বয় রয়েছে। এ দুটি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট কাজের পর আমাদের পেশির টিস্যু মেরামত ও পুনরায় কর্মক্ষম করে তোলে।

কয়েকটি গবেষণা বলছে, এ বৈশিষ্ট্যগুলো দুধকে বহু বাণিজ্যিক স্পোর্টস ড্রিংকের চেয়ে ভালো কর্মক্ষম পানীয় হিসেবে তৈরি করতে পারে এবং এটি দামেও সেসব পানীয়ের মাত্র কয়েক শতাংশ।

তবে সবার ক্ষেত্রে নিয়মিত গরুর দুধ পান পছন্দ না-ও হতে পারে, বিশেষ করে যারা নিরামিষজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করেন বা যাদের শরীর দুগ্ধজাত পণ্যগুলো অসহিষ্ণু। শরীর দুগ্ধজাত পণ্যে অসহিষ্ণু হলে আপনি ল্যাকটোজমুক্ত দুধ পান করতে পারেন। কারণ উদ্ভিজ্জ খাবারগুলো গরুর দুধের মতো সুবিধা দেয় না।

তরমুজের রস

এক কাপ তরমুজের জুস বা রসে আমাদের প্রতিদিনের পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের চাহিদার ৬ শতাংশ সরবরাহ করে। অন্যান্য ইলেকট্রোলাইটের মধ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সামান্য পরিমাণে সরবরাহ করে। এছাড়া তরমুজের রসে রয়েছে এল-সিট্রুলাইন। পরিপূরক মাত্রায় ব্যবহার করলে এ অ্যামিনো অ্যাসিড অক্সিজেন পরিবহন ও অ্যাথলিটদের পারফরম্যান্স বাড়িয়ে তুলতে পারে। যদিও তরমুজের রস অ্যাথলেটিকদের পারফরম্যান্স আসলেই কতটা বাড়িয়ে তুলতে পারে, এটা এখনো প্রমাণ করা যায়নি। আরো কিছু ফলও ইলেকট্রোলাইটের ভালো উৎস হতে পারে। কমলা ও চেরির রসে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস থাকে। এছাড়া এ ফলগুলো ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর বড় একটি উৎস।

ইলেকট্রোলাইট বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন ড্রিংকসের পরিবর্তে ফলের রস ব্যবহারের অন্যতম সুবিধা হলো ফলের রসে সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে ঘামলে শরীরে সোডিয়ামেরও স্বল্পতা দেখা দেয়। তখন ফলের এ রস দিয়ে শরীর পুনরায় হাইড্রেট হলেও সোডিয়ামস্বল্পতায় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এজন্য আপনি ফলের রস খাওয়ার পাশাপাশি ইলেকট্রোলাইটসমৃদ্ধ ড্রিংকসও কিছুটা পান করতে পারেন।

তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, কোনো কিছুই অতিরিক্ত মাত্রা হিতের বিপরীত হতে পারে। উচ্চ ক্যালরি ও উচ্চ চিনিযুক্ত ইলেকট্রোলাইট পানীয়গুলো অতিরিক্ত মাত্রায় পান করলে ডায়েট ভারসাম্যহীন হয়ে উঠতে পারে। ফলে স্বাস্থ্য নিয়ে আপনার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়বে।

আরএম-১২/১০/১১ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)