চুলকানি! এসব মারাত্মক রোগের ইঙ্গিত নয়তো?

চুলকানি

সাধারণত ত্বকের শুষ্কতার কারণেই চুলকানি অনুভূত হইয়ে থাকে। একারণে শীতের দিনগুলোতে চুলকানি বেড়ে যায়। যাদের ত্বকে চুলকানির প্রবণতা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও শীত তেমন মঙ্গলময় নয়।

এছাড়া চুলকানি কিছু চর্মরোগের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। জানেন কি, চুলকানি মারাত্মক রোগের লক্ষণও হতে পারে। তাই হেলাফেলা করে ভুল করবেন না। কারণ এমন কিছু রোগ রয়েছে যেগুলোর অন্যতম উপসর্গ চুলকানি। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক সেগুলো-

কিডনি রোগ

শেষ পর্যায়ের কিডনি রোগ অথবা ক্রনিক রেনাল ফেইলিউরে ভুক্তভোগীদের শরীরে তীব্র চুলকানি অনুভূত হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে ৪২ শতাংশ ডায়ালাইসিস রোগীর তীব্র মাত্রার চুলকানি হতে পারে। যদিও বিজ্ঞান এখনো আবিষ্কার করতে পারেনি কেন কিডনি রোগ চুলকানি সৃষ্টি করে। কিন্তু চিকিৎসকরা ধারণা করছেন- শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমার কারণে চুলকানি অনুভূত হয়। কারণ কিডনি রক্তপ্রবাহ থেকে বর্জ্য অপসারণে তখন ব্যর্থ হয়।

লিভারের রোগ

শরীরের সর্বত্র চুলকানি লিভারের রোগের নীরব লক্ষণ হতে পারে। যেখানে শেষ পর্যায়ের কিডনি রোগে অবিরত চুলকানি অনুভূত হয়, সেখানে এ ধরনের চুলকানি লিভার রোগের প্রাথমিক উপসর্গ।

ইয়েল স্কুল অব মেডিসিন ডিপার্টমেন্ট অব ডার্মাটোলজির সহকারী অধ্যাপক ক্যাথলিন কুক সুজি বলেন, ‘লিভার শরীরকে বিষমুক্ত করার জন্য সঠিকভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হলে বাইল অ্যাসিডের মতো বাইপ্রোডাক্ট জমতে থাকে, যা চুলকানির উদ্রেক করে। চিকিৎসা করতে হলে বাইল অ্যাসিড অপসারণ করার ওষুধ খেতে হবে।’

ডার্মাটোগ্রাফিয়া

হালকা চুলকানোর পর অল্প লালচে ফুলে গেলে এবং ফোলা স্থান ১৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে চলে গেলে একে ডার্মাটোগ্রাফিয়া বা ডার্মাটোগ্রাফিজমের (এক ধরনের ক্রনিক হাইভস বা আমবাত) লক্ষণ ধরে নেয়া হয়। এটি হচ্ছে এক্সট্রিম স্কিন কন্ডিশন, যেখানে ত্বক স্পর্শে সেনসেটিভ হয়ে পড়ে ও অত্যধিক হিস্টামিন নিঃসরণ করে। এর কারণ এখনো স্পষ্ট নয়, কিন্তু চিকিৎসকেরা ধারণা করেন মানসিক চাপ, ইনফেকশন, অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থ ও ওষুধ দ্বারা এটি উদ্দীপ্ত হতে পারে। শরীরের সেই অংশের ডার্মাটোগ্রাফিয়া তীব্র হতে পারে যা অন্য ত্বক বা কাপড়ের সংস্পর্শে বেশি আসে। এ ধরনের চুলকানি খুব তীব্র হলে  চিকিৎসক প্রদাহ প্রশমনের জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন প্রেসক্রাইব করতে পারেন।

মেরুদণ্ডের রোগ

পিঠের ওপরের অংশে মধ্যভাগে দীর্ঘস্থায়ী চুলকানি নার্ভ ম্যালফাংশন বা ত্রুটিপূর্ণ স্নায়ু কার্যক্রমের উপসর্গ হতে পারে। এ ধরনের চুলকানিকে নিউরোপ্যাথিক ইচ বলে, অর্থাৎ স্নায়ুতন্ত্রের রোগ সংক্রান্ত চুলকানি। চিকিৎসার পূর্বে চিকিৎসক প্রথম নিশ্চিত হবেন- চুলকানির উৎপত্তি মেরুদণ্ডের রোগ থেকে কিনা।

গবেষণায় দেখা গেছে, মেরুদণ্ডের রোগ (বয়স বা ইনজুরি জনিত) স্নায়ু চাপে রাখে। ফলে ত্বকে চুলকানি অনুভব হতে পারে। নিউরোপ্যাথিক চুলকানি শরীরের একপাশ অথবা উভয়পাশে হতে পারে। চুলকিয়ে প্রশমিত করা না গেলে তা বড় সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

ডা. রোসি বলেন, ‘একজিমার লোকেরা চুলকিয়ে ভালো অনুভূতি পায়, কিন্তু স্নায়ুর সমস্যা সংক্রান্ত চুলকানিতে চুলকিয়েও আরাম পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ চুলকানি তীব্র হয়ে থাকে। কেউ কেউ বলেন, এ অনুভূতি পোকামাকড় হাঁটার মতো।’

আরএম-১৭/০১/১২ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)