ফিস্টুলা হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

ফিস্টুলা

ফিস্টুলা রোগটিকে ভগন্দরও বলা হয়। এ রোগটি সবার কাছেই বেশ পরিচিত। যারা এই রোগে আক্রান্ত হয় একমাত্র তারাই বোঝে এর যন্ত্রণা কতটা। ফিস্টুলার অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেন।

তবে ফিস্টুলা কেন হয়, এর লক্ষণ কী ও এর সঠিক চিকিৎসা কী তা অনেকেই জানেন না। ফিস্টুলার বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। সাধারণত নালিটি মলদ্বারের কোন কোন স্তর ভেদ করেছে বা কতটা গভীরে প্রবেশ করেছে মূলত তার ওপর নির্ভর করেছে এর জটিলতা। চলুন জেনে নেয়া যাক ফিস্টুলা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য-

ফিস্টুলা হওয়ার কারণ

এ রোগটির উৎপত্তি হয় মলদ্বারের বিশেষ ধরনের সংক্রমণের কারণে। মলদ্বারের ভেতরে অনেকগুলো গ্রন্থি রয়েছে এগুলোর সংক্রমণের কারণে ফোড়া হয়। এই ফোড়া এক সময় ফেটে গিয়ে মলদ্বারের চর্তুদিকের, কোনো একস্থানে একটি ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে আসে এবং পুঁজ নির্গত হতে থাকে। এ সংক্রমণের কারণে মলদ্বারে প্রচুর ব্যথা হয়।

রোগী সারা দিন ব্যথায় কাতরাতে থাকে। পুঁজ বের হওয়ার পর ব্যথা কমতে থাকে। মলদ্বারে পার্শ্বস্থিত কোনো স্থানে এক বা একাধিক মুখ দিয়ে মাঝে মধ্যে পুঁজ বের হয়ে আসাকে আমরা ফিস্টুলা বা ভগন্দর বলে থাকি।

মলদ্বারের ক্যান্সার এবং বৃহদান্ত্রের প্রদাহজনিত রোগেও ফিস্টুলা হয়ে থাকে। মলদ্বারে যক্ষ্মার কারণেও ফিস্টুলা হতে পারে।

ফিস্টুলার প্রকারভেদ

সাধারণ ফিস্টুলা- এটি মলদ্বারের মাংশপেশির খুব গভীরে প্রবেশ করে না বিধায় চিকিৎসা সহজসাধ্য।

জটিল ফিস্টুলা- এর বিভিন্ন প্রকার ভেদ রয়েছে এবং তা নির্ভর করে এর নালিটি মলদ্বারের মাংসের কতটা গভীরে প্রবেশ করেছে এবং কতটা বন্ধ পথ পাড়ি দিয়ে এটি বাইরের মুখ পর্যন্ত এসেছে। এগুলোর চিকিৎসা সত্যিই দুঃসাধ্য। তারপর যদি এ নালি একের অধিক হয় তাহলে তো আর কথাই নেই। এ রোগের অপারেশনের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো সঠিকভাবে অপারেশন সম্পাদন করতে ব্যর্থ হলে রোগী মল আটকে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে।

ফিস্টুলা হওয়ার লক্ষণ

এ রোগের লক্ষণ মূলত তিনটি। যেমন- ফুলে যাওয়া, ব্যথা হওয়া এবং নিঃসরণ বা পুঁজ ও আঠাল পদার্থ বের হওয়া।

বেশিরভাগ রোগীই আগে মলদ্বারে ফোড়া হয়েছিল বলে জানান। ভেতরে ফোড়া হওয়ার জন্য ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়। যখন এগুলো ফেটে মুখ দিয়ে কিছুটা পুঁজ বের হয়ে যায় তখন ব্যথা এবং ফোলা কমে যায়। নিঃসরণ বা পুঁজ পড়া সাধারণত মাঝে মাঝে হয়। কখনো কখনো ২ থেকে ৪ মাস রোগটি সুপ্ত থাকে।

কখনো কখনো মলের সঙ্গে পুঁজ ও আম পড়তে থাকে। সমস্যা একটানা না থাকার কারণে রোগীরা অনেক সময় ভাবেন যে সম্ভবত ভালো হয়ে যাব। কিন্তু দু’চার মাস পর আবার একই সমস্যা দেখা দেয়।

কী কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন

> প্রক্টস্কপি, সিগময়ডসকপি

> কোলনস্কপি

> বেরিয়াম এক্সরে

> ফিস্টুলো গ্রাম

> এনাল এন্ডোসনোগ্রাফি।

চিকিৎসা

পাইলস বা ফিস্টুলার ক্ষেত্রে ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা উত্তম। কারণ যেহেতু মলদ্বার একটি সংবেদনশীল জায়গা, তাই সেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপারেশনের পর সংক্রমণ (ইনফেকশন) হতে পারে। জায়গাটি সংক্রমিত হলে জটিলতা আরো বেড়ে যায়। তিন থেকে চার মাস নিয়মিত ওষুধ সেবন ও ব্যবহার করলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করুন।

আরএম-২৩/১৪/০৩ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)