সব রোগ প্রতিরোধ করে কালিজিরা!

কিছু ভেষজ আছে যেগুলো যুগ যুগ ধরে মানুষ আস্থার সঙ্গে গ্রহণ করে যাচ্ছেন নানা রোগের ওষুধ হিসেবে। তার মধ্যেই একটি হল- কালিজিরা। প্রাচীনকাল থেকে কালিজিরা মানবদেহের নানা রোগের প্রতিষেধক এবং প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এ জন্যই এই জিনিসটিকে অনেকে ‘কালিহিরা’ বলেন। এটি শুধুই একটি মসলা নয়। এর কাজ শুধু খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতেই নয়, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়ও কালিজিরার ব্যবহার হয়। কালিজিরার বীজ থেকে একধরনের তেল হয়, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে আছে ফসফেট, আয়রন এবং ফসফরাস। এ ছাড়া কালিজিরা বিভিন্ন রোগের হাত থেকে দেহকে রক্ষা করে।

বিস্ময়কর এই জিনিসটির প্রশংসা করেছেন মুসলিমদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, কালিজিরায় সকল প্রকার রোগের উপশম আছে, তবে ‘আস্সাম’ ব্যতীত। আর ‘আস্সাম’ হলো মৃত্যু। এর ‘আল হাব্বাতুস্ সাওদা’ হলো (স্থানীয় ভাষায়) ‘শূনীয’ (অর্থাৎ কালিজিরা)। (মুসলিম, হাদিস : ৫৬৫৯)

খালিদ ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা (যুদ্ধের অভিযানে) বের হলাম। আমাদের সঙ্গে ছিলেন গালিব ইবনে আবজার। তিনি পথে অসুস্থ হয়ে গেলেন। এরপর আমরা মদিনায় ফিরলাম, তখনো তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাঁকে দেখাশোনা করতে আসেন ইবনে আবি আতিক। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা এ কালিজিরা সঙ্গে রেখো। এর থেকে পাঁচটি কিংবা সাতটি দানা নিয়ে পিষে ফেলবে, তারপর তারমধ্যে জয়তুনের কয়েক ফোঁটা তেল ঢেলে দিয়ে তার নাকের এদিক-ওদিকের ছিদ্র দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে প্রবিষ্ট করাবে। কেননা আয়েশা (রা.) আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে তিনি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, এই কালিজিরা ‘সাম’ ছাড়া সব রোগের ওষুধ। আমি বললাম, ‘সাম’ কী? তিনি বললেন মৃত্যু। (বুখারি, হাদিস : ৫৬৮৭)

তাই যেকোনো রোগ নিরাময়ে, রোগ থেকে নিরাপদ থেকে অন্যান্য সতর্কতার পাশাপাশি অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে কালিজিরা খাওয়া যেতে পারে।

এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক কেরটিন, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান এবং অম্ল রোগের প্রতিষেধকও।

এছাড়াও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গবেষণায় কালিজিরার নানা ধরণের উপকারিতার কথা পাওয়া যায়। সেগুলো হল-

১. মাথা ব্যথা উপশমে কালিজিরার তেল দারুণ উপকারী। এই তেল কপালে মালিশ করলে এবং তিন দিন খালি পেটে ১ চা চামচ তেল খেলে উপকার পাওয়া যায়।

২. চুলপড়া সমস্যার সমাধানেও দারুণ কার্যকরী কালিজিরা। এক সপ্তাহ ধরে নিয়মিত চুলে শ্যাম্পু করার পর তা ভালোভাবে শুকিয়ে পুরো মাথায় কালিজিরার তেল ভালোমতো লাগালে চালপড়া অনেক কমে যাবে।

৩. হাঁপানির রোগীরা বুকে ও পিঠে কালিজিরার তেল মালিশ করলে উপকার পাবেন।

৪. ডায়াবেটিসের জন্যও উপকারী কালিজিরার তেল ও চূর্ণ। নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৫. চা বা গরম পানির সঙ্গে কালিজিরার তেল মিশিয়ে পান করলে হৃদেরাগে যেমন উপকার পাওয়া যায়, তেমনি শরীরের বাড়তি মেদও কমে।

৬. পেটের গ্যাসের সমস্যার জন্যও কালিজিরা দারুণ উপকারী। এক কাপ দুধ ও এক চা চামচ কালিজিরার তেল একসঙ্গে মিশিয়ে দৈনিক পান করলে গ্যাসের সমস্যা কমে যায়।

৭. যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা কোনো না কোনোভাবে কালিজিরা খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। গরম ভাতের সঙ্গেও কালিজিরার ভর্তা খেতে পারেন।

৮. জ্বর হলে সকাল-সন্ধ্যায় লেবুর রসের সঙ্গে কালিজিরার তেল খেলে জ্বর দ্রুত সেরে যাবে।

৯. হাঁটুর ব্যথা সারাতে প্রতিরাতে কালিজিরার তেল মালিশ করুন, উপকার পাবেন।

১০. ছুলি বা শ্বেতী হলে আক্রান্ত স্থানে আপেলের টুকরো দিয়ে ঘষে নিন, তারপর কালিজিরার তেল লাগান। এভাবে ১৫ দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত লাগান।