এরশাদের অসুস্থতা নিয়ে যত কথা!

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ চিকিৎসার জন্য আবারো সিঙ্গাপুরে গেছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে সাবেক এই সামরিক শাসকের শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়েছে বলে তাঁর দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এবং মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে তিনি দ্বিতীয় দফায় সিঙ্গাপুরে গেলেন চিকিৎসার জন্য।

এর ঠিক আগে আগে তিনি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবং জেনারেল এরশাদের ভাই জিএম কাদের জানিয়েছেন, তাঁর ভাই বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছেন।

“সর্বশেষ তিনি খুবই দুর্বলতায় ভুগছিলেন। তিনি আস্তে আস্তে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যাচ্ছিলেন। এখানকার চিকিৎসকেরা চেষ্টা করছিলেন সেটা কাটাতে, কিন্তু সেটার প্রগ্রেস আমাদের কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি,” বলেন মি. কাদের।

তিনি জানান, সেজন্যই সিঙ্গাপুরে ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ করে সাবেক রাষ্ট্রপতিকে সেখানে আরো একবার পাঠানো হয়েছে।

জিএম কাদের বলেন, “তার বর্তমান অবস্থা এখনো আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না। তবে গতকাল যে অবস্থায় তিনি গেছেন, আজ সকালে তার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো বলে আমাকে জানানো হয়েছে।”

জাতীয় পার্টির এই নেতা জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে জেনারেল এরশাদের হার্টের ভালভে একটি অপারেশন হয়েছিল। এছাড়া তিনি লিভারের সমস্যায় ভুগছিলেন, যে কারণে তার হজমেও সমস্যা হচ্ছিল।

এর বাইরে তার রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সমস্যা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন মি. কাদের।

জেনারেল এরশাদের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে গেছেন তার ছোট ভাই হুসেইন মোর্শেদ এবং তার স্ত্রী। এছাড়া সঙ্গে আছেন তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী।

অসুস্থতা নিয়ে আলোচনা

গত কয়েকদিন ধরে এরশাদের অসুস্থতা নিয়ে গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোচনা চলছে। কোন কোন খবরে সাবেক রাষ্ট্রপতি বাকশক্তি এবং চলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন বলেও জানানো হয়েছে।

তবে জিএম কাদের এসব খবর সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন।

তিনি বলেন, “তিনি (জেনারেল এরশাদ) অসুস্থ এবং খুবই দুর্বল, সেটা ঠিকই আছে। কিন্তু তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন সেটা একেবারেই মিথ্যা কথা।”

তবে দুর্বলতার কারণে রোববার মি. এরশাদকে হুইলচেয়ারে করেই তাঁর বাসা থেকে বিমানবন্দরে নেয়া হয়েছে।

অন্য সময়ে বিদেশ যাওয়ার আগে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলে যান, কিন্তু এবার তেমনটা হয়নি।

এরশাদের অসুস্থতা নিয়ে কেন এত আলোচনা

গত দেড় মাসের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার মি. এরশাদ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেলেন।

এর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর দিন অর্থাৎ ডিসেম্বরের ১০ তারিখে তিনি সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন।

ওই সময়ে রক্তে হিমোগ্লোবিনের সমস্যা নিয়ে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন তিনি – ১৬ দিন চিকিৎসা শেষে নির্বাচনের আগে ২৬শে ডিসেম্বর দেশে ফেরেন এরশাদ।

তার আগে নভেম্বরের মাঝামাঝি প্রায় দুই সপ্তাহ তিনি সিএমএইচে চিকিৎসা নেন।

জেনারেল এরশাদের অসুস্থতা বরাবরই বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনের আলোচিত বিষয়।

২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। পরে দলটির নেতৃবৃন্দ এবং মি. এরশাদ নিজেও সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন যে স্ব-ইচ্ছায় তিনি সেবার হাসপাতালে যাননি।

গত কয়েক দিনে সাবেক এই জেনারেলের অসুস্থতার খবর নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি মূলত ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল সিএমএইচে চিকিৎসা নেন, তবে তাঁর চিকিৎসার বিস্তারিত প্রায় কখনোই প্রকাশ করা হয় না।

১৯৩০ সালে জন্ম নেয়া হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ পয়লা ফেব্রুয়ারি ৯০ বছর বয়সে পা দেবেন।

বিএ-২৩/২১-০১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)