১৪ হাজার আক্রান্ত হলেও মারা গেছে মাত্র ১৪ জন!

পৃথিবীর মানচিত্রে আরেক টুকরো বাংলাদেশের কথা বলছি। যেখানে ‘বাংলাদেশী’ আক্রান্তের সংখ্যা খোদ আমাদের দেশের মোট আক্রান্তের চেয়েও বেশি। আজ সোমবার পর্যন্ত বাংলাদেশে যখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৯১৩ জন, তখন সেই দেশটিতেই ‘প্রবাসী বাংলাদেশী’ আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৩৯৩ জন। আমি সিঙ্গাপুরের কথা বলছি।

যেখানে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ বাংলাদেশী জীবিকার খোঁজে পাড়ি জমিয়েছেন এবং তাদের কষ্টার্জিত অর্থে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্মৃদ্ধ হয়েছে এবং হচ্ছে।

তবে আক্রান্তের এই তথ্যে আমি যতটা না আহত হচ্ছি তার চেয়েও বেশি আফসোস করছি। কারণ একটাই। তা হলো- চিকিৎসা ব্যবস্থা। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের চেয়েও বেশি বাংলাদেশী আক্রান্ত হলেও মৃত্যুর কোন রেকর্ড নেই। এমনকি দেশটিতে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার আক্রান্ত হলেও মারা গেছে মাত্র ১৪ জন। অথচ, আমাদের মৃত্যু সংখ্যা দেড়শো ছাড়িয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায়, আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার কতটা দৈন্য দশা। অথবা, কভিড-১৯ মোকাবিলায় আমাদের সার্বিক ব্যবস্থাপনা কতটুকু কাযর্কর হচ্ছে? নতুবা আমাদের কপাল খারাপ!

যাইহোক, সিঙ্গাপুরে আমাদের প্রবাসী শ্রমিক ভাইয়েদের ডরমেটরি বা গণরুমে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। আর সে কারণেই এই ভাইরাস সেখানে এতো দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে। একেকটি ডরমেটরিতে ১০-১৫ জন থেকে শুরু করে ৫০ জন পর্যন্তও থাকেন তারা। ফলে একজন আক্রান্ত হলেই তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। তাছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির উপসর্গ প্রকাশ না পাওয়ায় নিজের অজান্তেই অন্যকে আক্রান্ত করার ঘটনা ঘটছে।

আশার কথা হলো, সিঙ্গাপুর সরকার খাদ্য-চিকিৎসা থেকে শুরু করে বাংলাদেশীদের সব ধরনের খরচ-খরচা মেটাচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ওয়ার্ক পারমিটেরও মেয়াদ বাড়িয়েছে। সিঙ্গাপুরে যতজন বাংলাদেশী কর্মীর সাথে কথা বললাম সবাই সিঙ্গাপুর সরকারের প্রশংসা করলেন। কারণ, ভালোকে ভালো না বলে উপায় নেই। তবে, স্থানীয় বাংলাদেশ দূতাবাসের কথা জিজ্ঞেস করলেই ‘কবি নিরব’। অবশ্য ভালোও বলেছেন কেউ কেউ। কারণ সিঙ্গাপুর সরকারের কাছ থেকে এসব সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পেছনে তারাও ভূমিকা রাখেন। সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত মুস্তাফিজুর রহমান বললেন, আমাদের তেমন কিছু করতে হচ্ছে না, সিঙ্গাপুর সরকারই সব করছে। আমরা কেবল বাংলাদেশীর আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছি তারা যেন ভেঙে না পড়েন।

উনাদের এই কাজটিকেও আমি সমর্থন করি। রাষ্ট্রদূত মহোদয় আরো জানালেন, সিঙ্গাপুরে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশী আক্রান্ত হলেও পরিস্থিতি অতোটা খারাপ না। অন্তত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মতো বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনতে সিঙ্গাপুর সরকারের পক্ষ থেকে কোন চাপ নেই। দেশটির অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ায় এখনো পর্যন্ত ওরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ারও আভাস পাচ্ছেন না তারা।

পুনশ্চ: আচ্ছা, যারা কথায় কথায় বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর, ব্যংকক, লস এঞ্জেলসের সাথে তুলনা করতেন তারা কোথায়? তাদের কাছে জানতে চাই, বাংলাদেশে মৃত্যুহার এতো বেশি কেন? আর আপনাদের কিছু একটা হলেই সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে ছোটেন কেন?

লাকমিনা জেসমিন সোমার ফেসবুক আইডি থেকে সংগৃহিত