উন্নতি সাধনের জন্য আল্লাহ রোজা ফরজ করেছেন

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম হলো রোজা। মানুষের আত্মিক উন্নতি সাধনের জন্য আল্লাহ রোজা ফরজ করেছেন। রোজার মাধ্যমে মানুষ তাকওয়ার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে। রমযান মাসে তাই তাকওয়া অর্জনের সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়। এ মাসে প্রত্যেক সৎকর্মের ফলও অনেক বেশি। আর রোজাদার বান্দাহ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। রোজাদারের মুখের গন্ধও আল্লাহর কাছে সুগন্ধীর মতো প্রিয়। এ সম্পর্কে সিহাহ সিত্তার অন্যতম গ্রন্থ ইবনে মাজাতে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “বনী আদমের প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব দশগুণ হতে সাতশত গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, বান্দা একমাত্র আমার সন্তুষ্টির জন্যই রোজা রাখে, তাই আমি নিজেই এর পুরস্কার দিবো। বান্দাহ একমাত্র আমার সন্তুষ্টির অনে¦ষায় কাম-ভাব পূরণ ও খাওয়া-দাওয়া পরিহার করে। রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে, একটি আনন্দ হলো ইফতারের সময়, দ্বিতীয় আনন্দ হলো তার প্রভুর সাথে সাক্ষাতের সময়। রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তায়ালার নিকট মিশক আম্বরের চেয়ে অতীব উৎকৃষ্ট।”

রাসূলে মাকবুল (সাঃ) বলেছেন, রমযানকে তাওরাতে ‘হাত্ব’ অর্থাৎ পাপ মোচনকারী বলা হয়েছে। আর বাইবেলে একে বলা হয়েছে ‘ত্বাব’ অর্থাৎ পবিত্রকারী। এ মাসে সিয়াম পালনকারী পাপমুক্ত ও পবিত্র হয়ে যায় বলে ‘হাত্ব’ ও ‘ত্বাব’ বলা হয়। আর সিয়াম সাধনার মাধ্যমেই আল্লাহর সাথে বান্দার নৈকট্য লাভের সুযোগ লাভ হয় বলে ‘যবুর’-এ রমযানকে ‘কুররাত’ বা নৈকট্য বলা হয়েছে। আল কুরআনে একে বলা হয়েছে ‘রমাদান’। এটি ‘রমদ’ শব্দ মূল থেকে নির্গত। এর এক অর্থ দগ্ধ করা। কৃচ্ছ্রতার দহনে মুমিনের দেহমন পবিত্র হয় বলে এ নাম দেয়া হয়েছে। এর আরেকটি অর্থ ‘রহমত’। হেমন্তকালের প্রথমে যে বৃষ্টি হয়, তাতে ফসল ফলনের বিশেষ রহমত থাকে। তাই আরবগণ সিয়ামের এ মাসকে রহমতের মাস বা রমাদান বলে।

সিয়াম আবার পবিত্র ওষুধ। আধ্যাত্মিক সাধনায় উন্নতির জন্য এ যাবত এমন সাধক পাওয়া যায়নি, যিনি সিয়াম-সাধনার সাহায্য গ্রহণ করেননি। আল্লামা ইকবাল বলেছেন, ‘সিয়াম-সাধনায় আধ্যাত্মিক পথের আলো দেখা যায়। তিনি এক নাগাড়ে ষাট দিন পর্যন্ত সিয়াম পালন করে সাধনায় নিয়োজিত থাকতেন এবং এ সময় রাতে কেবল একবার মাত্র সামান্য আহার্য বা দুধ খেতেন। দুনিয়ার বড় বড় সাধকের জীবনী এ ধরনের বহু ঘটনাপূর্ণ।

উপবাস ও ইন্দ্রিয় দমন যদি ব্যক্তিকে প্রকৃত মনুষ্যত্বে উন্নীত করতে না পারে তাহলে সে উপবাসে কোন লাভ নেই। সিয়াম-সাধনায় অনুতাপের আগুন নিজের অপকর্মকে দগ্ধ করবে। মনের মধ্যে অপরাধবোধ জাগ্রত করবে। নত শীরে আল্লাহর কাছে তাওবা করে অন্যায় কাজ থেকে ফিরে আসতে হবে। প্রতিবেশীর হক আদায় করার জন্য আগ্রহী হতে হবে। আল্লার আদেশ নিষেধ মেনে চলার জন্য মাসনিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে সিয়াম সাধনার মাধমে। তবেই এ সিয়াম সাধনা ইহ ও পরজীবনে কল্যাণ বয়ে আনবে।

রমাদানের সিয়াম সাধনার মর্যাদা ও গুরুত্ব বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। কেননা অন্যান্য সকল ইবাদাতের চেয়ে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেননা আল্লাহ বলেছেন, রোজা একমাত্র আমার জন্যই রাখা হয়, আর আমিই এর প্রতিদান দেব।

রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন, পবিত্র রমাদান মাসে বেহেশতকে অপূর্ব সুঘ্রানে সুরভিত করা হয়।

হযরত সালমান ফারসি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, “রাসূল (সাঃ) বলেন, যে রমাদান মাসে নফল ইবাদত আদায় করবে অন্য মাসের ফরজ এবাদতের সমতুল্য সওয়াব পাবে এবং যে ব্যক্তি রমাদান মাসে একটি ফরজ আদায় করবে সে অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ আদায় করার সমপরিমাণ সওয়াব পাবে।” (মেশকাত ঃ ১/১৭৩)

বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রমাদান মাসের জন্য বেহেশতকে সুসজ্জিত করা হয়। যখন রমাদান মাসের প্রথম রাত্র আগমন করে তখন আরশের তলদেশ হতে একটি সুমধুর হাওয়া বইতে থাকে। যা প্রবাহে জান্নাতের পাতা পল্লব ও দরজার কড়া সমূহ হেলতে আরম্ভ করে। যার কারণে এমন এক মনমুগ্ধকর ও হৃদয়স্পর্শী সুর উত্থিত হয় যে, শ্রোতারা ইতিপূর্বে কখনও এরূপ আর শুনতে পায়নি। তখন বেহেশতের হুরসমূহ আত্মপ্রকাশ করে জান্নাতের বালাখানা সমূহের মধ্যে কেউ দাঁড়িয়ে ঘোষণা করতে থাকে, “আল্লাহর কোন প্রিয় বান্দা আছে কি? যারা আমাদের সঙ্গে বিয়ে হবার জন্য আল্লাহর দরবারে দরখাস্ত করবে?”

তারপর জান্নাতের হুরবালাগণ জান্নাতের প্রহরী রিদওয়ানের নিকট জিজ্ঞাসা করবে, ইহা কোন রাত্রি? তদুত্তরে তিনি বলেবেন, ইহা রমাদানের প্রথম রাত্রি। মুহাম্মদ (সাঃ) এর রোজাদার উম্মতের জন্য জান্নাতের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয়ছে। হুযুর (সাঃ) বলেন, আল্লাহপাক রিদওয়ানকে বলবেন, আহমদ (সাঃ) এর রোজাদার উম্মতের জন্য জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দাও।

সাহল ইবনে সাআদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, “জান্নাতের দরজা সর্বমোট আটটি। তার একটি দরজার নাম ‘রাইয়্যান’। যে দরজা দিয়ে একমাত্র রোজাদার ব্যক্তিই প্রবেশ করতে পারবে।” (মোশকাত ঃ ১৭৩)

আল্লাহ প্রদত্ত ইসলামের প্রতিটি বিধান এবং মহানবী (সাঃ) এর সকল সুন্নত ও আদর্শ উৎকর্ষে ভরপুর বিশ্ব মানবতার কল্যাণকর। শারীরিক-আত্মিক, ইহলৌকিক ও পরলৌকিক যাবতীয় কল্যাণ ও উপকারের সমাহার। অনেক সময় আমরা জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা ও অনভিজ্ঞতার কারণে এটাকে খাটো করে দেখার অবকাশ পাই, অথচ বাস্তব তা নয়।

রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মৃগনাভি ও কস্তুরী অপেক্ষা অধিক পছন্দনীয়। রোজ মানুষের ঢাল স্বরূপ। অতএব, তোমাদের কেউ রোজা রাখলে অশ্লীল কথাবার্তা বলবে না এবং অনর্থক উচ্চস্বরে বলবেনা। আর যদি কোন (অজ্ঞমূর্খ) লোক তাকে গালমন্দ করে বা তার সাথে ঝগড়াঝাটি করতে ইচ্ছে করে, তবে তার উচিত যে, সে একথা বলে দিবে, “আমি রোজাদার”। (মেশকাত ঃ ১/১৭৩)

এসএইচ-০১/১০/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)