অবশ্যই কুরআন শিক্ষা করতে হবে

আজ রমযান মাসের ২৮তম দিন। আর দু’একদিনের মধ্যে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেবে পবিত্র রমযান। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের এই পবিত্রতম দিনগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমরা কী অর্জন করলাম। তা-ই এখন হিসাব নিকাশের পালা। রাসূল (সা:) বলেছেন, “যে ব্যক্তি রমযান মাস পেল অথচ নিজের গুনাহগুলো মাফ করাতে পারলো না তার চেয়ে হতভাগা আর কেউ নাই।” রমযানের শেষ পর্যায়ে এসে তাই আমাদের পর্যালোচনা করা দরকার ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে রোযা রাখতে পেরেছি কি না। রোযা থেকে কতটুকু ফায়দা আমি নিতে পেরেছি।

মানুষ অপরাধ করলে শাস্তি দেয়া হয়। উদ্দেশ্য এ শাস্তিকে ভয় করে সে যেন আর এরকম অপরাধ না করে। অনুরূপভাবে তাকওয়ার গুণ শিখানোর জন্য আল্লাহ রোযা ফরয করেছেন। দীর্ঘ এক মাস আমরাও প্রচেষ্টা চালিয়েছি, রোযা রেখেছি। এখন প্রশ্ন হলো: পানাহার ইত্যাদি ত্যাগ করে দীর্ঘ একটি মাস রোযা রাখার পরও যদি তাকওয়ার গুণাবলী তৈরি না হয় তাহলে ঐ রোযা কতটুকু কাজে আসবে।

আল্লাহ বলেছেন, “আমি কুরআনকে বুঝা সহজ করে দিয়েছি, আছো কি কোন গবেষক?” এ রমযান মাসের মর্যাদা, শবে কদরের মর্যাদা আল কুরআনের কারণেই। আমরা অনেক চেষ্টা সাধনা করে জীবনের সফলতার জন্য অনেক কিছু করে থাকি। কিন্তু পবিত্র কুরআন বুঝার জন্য কোন প্রকার চেষ্টাই করি না। এই কুরআন নাযিলের পবিত্র মাসে পবিত্র কুরআন শিক্ষা ও বুঝার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা আল বাকারাতে বলেছেন, এই কুরআন মুত্তাকীদের জন্য হেদায়াত। মুত্তাকী তারাই যারা কুরআন থেকে হেদায়ত পেতে চায় এবং এ আকাক্সক্ষা থেকেই তারা কুরআন অধ্যয়ন করে। কুরআন নিশ্চয়ই তাদেরকে সঠিক ও সত্য পথ সিরাতাল মুসতাকীমের পথ প্রদর্শন করবে। কিন্তু যারা হেদায়াত পাবার উদ্দেশ্যে পড়বে না তারা হেদায়াত পাবে না। যেমন পাশ্চাত্য জগতে অনেক প-িত ব্যক্তি মুসলমানদের সম্পর্কে জানা, কুরআন সম্পর্কে জানা অথবা কোন গবেষণার জন্য অথবা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কৌশল তৈরির জন্য কুরআন পড়লে নিঃসন্দেহে কুরআন তাদের হেদায়াত দিবে না, সত্য পথের সন্ধান পাবে না।

এই রমযান মাস কুরআন নাযিলের মাস। কুরআনের কারণেই এ মাসের মর্যাদা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম হয়েছে। আর কুরআনকে যতদিন মুসলমানরা আঁকড়ে ধরেছিল ততদিন তারা সফল হয়েছিল। কেউ তাদের পদানত করতে পারেনি। এজন্য কুরআন মুসলিম জাতির বেঁচে থাকার দলীল। এ রমযানে আমরা কুরআনকে যেভাবে পড়েছি, রমযান শেষে বাকী দিনগুলোতে কুরআনকে বুঝা, মানা ও প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

প্রত্যেক মুসলিমকে কুরআন পড়া জানতে হবে। যে নিজেকে মুসলিম হিসাবে দাবী করবে তাকে অবশ্যই কুরআন শিক্ষা করতে হবে। কুরআন শিক্ষা করা এতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, আল্লাহ তা‘আলা কুরআন শিক্ষা করা ফরয করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন’ [সূরা আলাক : ১]

কুরআন শিক্ষায় কোন প্রকার অবহেলা করা যাবে না। উম্মাতকে কুরআন শিক্ষার নির্দেশ দিয়ে ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তিলাওয়াত কর’ [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ: ৮৫৭২]।

কুরআন তিলাওয়াত আল্লাহর সাথে একটি লাভজনক ব্যবসা। বিভিন্ন ব্যবসায় লাভ এবং ক্ষতি দুটিরই সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এখানে লাভ ছাড়া কোন প্রকার ক্ষতির অংশ নেই। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে, আমার দেয়া রিজিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো অধিক দান করবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’’ [সূরা ফাতির ২৯-৩০]

কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে বিরাট সওয়াব অর্জন করার সুযোগ রয়েছে। এর সাথে অনেক উপকারিতাও রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা. আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মীম একটি হরফ।’’ [সুনান আত-তিরমিযি:২৯১০]

কুরআন শিক্ষার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা যায়। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয় ’’ [বুখারী: ৫০২৭]।

কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে। এটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কুরআন তিলাওয়াত কর, কারণ, কুরআন কেয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে’ [মুসলিম: ১৯১০]।

এসএইচ-০৮/০৩/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)