স্ত্রী ছাড়া রিফাতকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেনি (ভিডিও)

বরগুনায় রাস্তায় ফেলে প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফ (২৫) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রকাশ্যে এমন হত্যাকাণ্ডের সময় স্ত্রী ছাড়া রিফাতকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেনি।

ওই হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল।

ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, দিনদুপুরে শত শত মানুষের সামনে রিফাত শরীফকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে একের পর এক কোপ দিচ্ছে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী। অথচ কেউ এগিয়ে আসছে না। স্বামীকে বাঁচাতে রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি একাই চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। হামলাকারীদের সঙ্গে রীতিমত ধস্তাধস্তি হয়েছে তার। আর কিছু করতে না পেরে হামলাকারীদের পেছন থেকে জড়িয়েও ধরে নিবৃত করতে চেয়েছিলেন। তবু শেষ রক্ষা হয়নি।

মিন্নি কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন, ‘চিৎকার করেছি কেউ একটু সাহায্যও করে নাই। একাই চেষ্টা করছি অনেক, কিন্তু ফিরাইতে পারি নাই।’

তিনি বলেন, ‘আমি অস্ত্রের মুখে পড়েও অনেক বাঁচানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু বাঁচাতে পারি নাই। আমার আশেপাশে অনেক মানুষ ছিল। আমি চিৎকার করছি, সবাইকে বলছি – ওরে একটু বাঁচান। কিন্তু কেউ এসে আমারে একটু সাহায্যও করে নাই।’

‘বিভীষিকাময়’ সেই অভিজ্ঞতার কথা ব্যক্ত করার পর হত্যাকারী সম্পর্কে আয়েশা বলেন, ‘আমাকে হুমকি দিত – কথা না বললে, বলতো মাইরে ফালাবে। তার সঙ্গে কথা বলতে হইবে, ঘুরতে যাতি হইবে। নাইলে বলতো তোমার ভাইরে মাইরে ফালাবো। তোমার বাপেরে কোপাবো।’

স্বামী হত্যার বিচার চাই জানিয়ে আয়েশা আক্তার বলেন, ‘ আমি চাই আমার স্বামীর হত্যাকারীদের এবং এ হত্যায় সাহায্যকারীদের সবার যেন ফাঁসি হয়।’

প্রসঙ্গত, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়েশাকে বরগুনা সরকারি কলেজে নিয়ে যান রিফাত। কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ আরও দুই যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে তারা। রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন।

কিন্তু কিছুতেই হামলাকারীদের থামানো যায়নি। তারা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন রিফাত শরীফকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।

নিহতের পরিবার জানায়, রিফাতকে কুপিয়ে হত্যায় অংশ নেয় নয়ন বন্ডসহ ৪-৫ জন। রিফাতের সঙ্গে দুই মাস আগে পুলিশলাইন সড়কের আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বিয়ে হয়। বিয়ের পর নয়ন মিন্নিকে তার প্রেমিকা দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিতে থাকে।

রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, নয়ন প্রতিনিয়ত আমার পুত্রবধূকে উত্ত্যক্ত করত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিত। এর প্রতিবাদ করায় আমার ছেলেকে নয়ন তার দলবল নিয়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, আমার একমাত্র ছেলেকে যারা দিনে-দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।

বিএ-১০/২৭-০৬ (আঞ্চলিক ডেস্ক)