নানা অভিযোগের বেড়াজালে বেসরকারি মাদরাসাগুলো

নিয়ম না মেনে পরিচালনা পর্ষদ গঠন, দাতা সদস্য নির্বাচন, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতা, আর্থিক দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে দেশের বেসরকারি মাদরাসাগুলোর পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে। অভিভাবক, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষের করা এমন ৯৪টি অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তে নেমেছে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব অভিযোগের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। তাই মাদরাসাগুলোর অনিয়ম-নৈরাজ্য বন্ধ করে পাঠদান স্বাভাবিক রাখা জরুরি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে মাদরাসা অধিদফতর অনুমোদিত মাদরাসার সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। এর মধ্যে ইবতেদায়ি (প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি) মাদরাসা ৩ হাজার ৪৩৩টি। দাখিল মাদরাসা (ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি) ৬ হাজার ৫৯৩টি, আলিম (একাদশ ও দ্বাদশ) ১ হাজার ৫৫৮টি এবং কামিল (মাস্টার্স বা স্নাতকোত্তর) মাদরাসার সংখ্যা ২১৯টি। এর বাইরেও এমপিওবিহীন মাদরাসা রয়েছে ১ হাজার ৭৩০টি। দেশের মাদরাসাগুলো ম্যানেজিং কমিটি দিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে এসব মাদরাসার বিরুদ্ধে নানা নৈরাজ্যের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এক হাজারের বেশি নানা ধরনের অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগের বেশিরভাগই নিয়ম না মেনে ম্যানেজিং কমিটি গঠন, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতা বিশেষ করে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগই বেশি। আর এর সঙ্গে অধ্যক্ষ এমনকি কিছু শিক্ষকদের জড়িত থাকার বিষয়ও উঠে এসেছে। এসব অভিযোগ শুধু শিক্ষকরাই নয়, অভিভাবক, সাধারণ মানুষ এমনকি পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও করেছেন বলে জানা গেছে।

হাজার অভিযোগের মধ্য থেকে ৯৪টি অভিযোগ আমলে নিয়ে এদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। এগুলোর মধ্যে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১১টি, রাজশাহী বিভাগে ১৩টি, রংপুরে ২৭টি, খুলনা ১২টি, বরিশাল ১৫টি এবং সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের ১৪টি মাদরাসা রয়েছে।

অভিযোগ আসা মাদরাসাগুলোর মধ্যে- ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার নারান্দিয়া দাখিল মাদরাসার বিরুদ্ধে নিয়ম বর্হিভূতভাবে ম্যানেজিং কমিটি গঠন; জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার মহিষা বাদুরিয়া দাখিল মাদরাসা, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার পটকা দাখিল মাদরাসার বিরুদ্ধে অ্যাডহক কমিটি নিয়ে বিরোধ ও টাঙ্গাইলের ঘাঁটাইল উপজেলার পাঁচকড়ি দাখিল মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ এসেছে।

অন্যদিকে, সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর তায়িদুল ইসলাম রাহমানিয়া দাখিল মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটিতে সদস্য নিয়োগ ও আর্থিক দুর্নীতি এবং কুমিল্লার দেবিদ্বারে নাবিয়াবাদ ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পদ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির অভিযোগ এসেছে। এরকম ৯৪টি অভিযোগ চিহ্নিত করে গত ১ আগস্ট এসব মাদরাসা পরিচালনা পরিষদের সমস্যা চিহ্নিত করতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে সরেজমিন পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড।

মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাইসার আহমেদ জানিয়েছেন, যদিও এসব অভিযোগের ভিত্তিতে মাদরাসা ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে বড় ধরনের শাস্তি দেওয়ার সুযোগ বোর্ডের নেই। তবে অভিযোগ গুরুতর হলে এমপিও বাতিল করার ক্ষমতা রাখে সরকার। তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে, সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাদরাসায় শৃঙ্খলতা এনে পাঠদানের পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যাতে শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করতে পারে সেদিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে।’

এদিকে মাদরাসাগুলোর দেখভাল করতে যে পরিমান জনবল প্রয়োজন তা নেই মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের। এই ১২ হাজার মাদরাসা মনিটরিং এর জন্য কাজ করছেন মাত্র ৩৬ জন স্টাফ। এদের মধ্যে কর্মকর্তাদের পাশাপাশি অফিস সহকারীকেও এ সংক্রান্ত কাজ করতে হয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। জনবলের অভাবে অনেকটা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) ওপর নির্ভর হয়ে চলে মাদরাসা অধিদফতর। মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিক ও শৃঙ্খলতা বজায় রাখতে ২০১৫ সালে মাদরাসা অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জনবল সংকট নিয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান।

মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘স্বল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে কার্যক্রম চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে জনবল নিয়োগ চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাহিদা প্রস্তাব পাঠানো হয়।’ এসময় আগামী একবছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি পূর্ণমাত্রায় জনবল নিয়ে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এসএইচ-০৭/২৬/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : সারাবাংলা)