যেভাবে চলবে করোনাভাইরাস ‘ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন’

দেশে পূর্বঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী শনিবার থেকে গণ টিকাদান কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু না হলেও ‘ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন’ শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে।

শনিবার থেকে এই টিকাদান ‘ক্যাম্পেইন’ কীভাবে শুরু হবে, সেই বিষয়ে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী ৭ই অগাস্ট থেকে শুরু হতে যাওয়া টিকাদান ক্যাম্পেইনে কোভিড ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আসতে যাচ্ছে:

২৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী জনগোষ্ঠী

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পঞ্চাশের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠী, নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী

দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠী

সরকার বলছে, এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সারাদেশে ৪ হাজার ৬০০টি ইউনিয়নে, এক হাজার ৫৪টি পৌরসভায় ও সিটি কর্পোরেশনের ৪৩৩টি ওয়ার্ডে টিকাদান কর্মসূচি চালানো হবে।

৭ই অগাস্ট সারাদেশে সব ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায়

৭ই অগাস্ট ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ে যেসব এলাকায় টিকা দেয়া সম্ভব হবে না সেসব এলাকায় ৮ই অগাস্ট ও ৯ই অগাস্ট টিকা দেয়া হবে

৭ই অগাস্ট থেকে ৯ই অগাস্ট সিটি কর্পোরেশন এলাকায়

৮ ও ৯ই অগাস্ট দুর্গম/প্রত্যন্ত অঞ্চলে

১০ই অগাস্ট থেকে ১২ই অগাস্ট বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের

সরকার প্রাথমিকভাবে ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের টিকা দেয়ার বিষয়ে চিন্তা করলেও পরে সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “১৮ বছর বয়সের বেশি অনেকেরই জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। পরিচয়পত্র ছাড়া টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করতে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে, তা সামাল দেয়া কঠিন হবে।”

বাংলাদেশে সরকারি হিসেব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত এক কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে আর দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন হয়েছে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষের।

টিকাদান কর্মসূচী নিয়ে বারবার অবস্থান পরিবর্তন করাকে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব হিসেবে দেখছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

গ্রাম পর্যায়ে টিকাদানের কর্মসূচী ৭ই অগাস্ট শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসে।

বৃহস্পতিবার শুরুতে জানানো হয় যে এই গণটিকা কার্যক্রমের পরিকল্পনা পেছানো হয়েছে এবং ৭ তারিখ ‘পরীক্ষামূলক’ টিকা দেয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন যে গ্রাম পর্যায়ে টিকা দেয়ার ব্যবস্থাপনায় কোন জটিলতা হয় কিনা – সেটা দেখার জন্য এই পরীক্ষামূলক টিকাদান বা ‘টেস্ট রান’ প্রয়োজন।

টিকাদান কর্মসূচি পেছানোর কারণ হিসেবে ব্যবস্থাপনায় জটিলতার পাশাপাশি লকডাউনের সময় টিকা সরবরাহে সমস্যা হতে পারে, এমন যুক্তিও দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এসব বক্তব্যকে ‘খোঁড়া যুক্তি’ বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বে-নজীর আহমেদ বলেন, “আসলে যথাযথ প্রস্তুতি না নিয়ে টিকা কার্যক্রম শুরু করার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল বলে মনে হয়।”

সরকারের পক্ষ থেকে দেড় কোটি টিকা মজুদের দাবি করা হলেও টিকার মজুদের চেয়ে টিকাদানের ক্ষেত্রে আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলোকে এ মুহূর্তে বড় সমস্যা হিসেবে মনে করছেন তিনি।

এসএইচ-১০/০৬/২১ (অনলাইন ডেস্ক)