টেনিস শিল্পী ফেদেরা দিলেন কোর্টে শেষ আঁচড়

লেভার কাপের বিদায়ী ম্যাচের ফলাফল এমন হোক, কেউই হয়তো চায়নি। তবে রাফায়েল নাদালের সাথে জুটি বেধে জ্যাক সক ও ফ্রান্সেস তিয়াফোর কাছে হেরে যাওয়া কেবল হয়তো মনে রাখবে পরিসংখ্যানের নিষ্প্রাণ কিছু সংখ্যা। কিন্তু মহাকালের কাছে দিনটি প্রকাশ করবে এক বিশাল যতিচিহ্ন। এদিনই পেশাদার টেনিস কোর্টে শেষবারের মতো পড়েছে এই খেলার ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ধ্রুপদী শিল্পী রজার ফেদেরারের পায়ের ছাপ। বিদায়ী সাক্ষাৎকারে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই সুইস টেনিস গ্রেট। ফেদেরারের অশ্রুসিক্ত সাক্ষাৎকারে কান্না লুকোনোর চেষ্টাও করেননি রাফায়েল নাদাল।

সক-তিয়াফো জুটির কাছে টাইব্রেকে ৪-৬, ৭-৬ (২), ১১-৯ সেটে হেরে গেছেন ফেদেরার-নাদাল জুটি। শেষটা জয় দিয়ে রাঙানো গেল না বলে হয়তো কোনো টেনিসপ্রেমীর মনে অতৃপ্তি থাকবে না। শিল্পীর তুলি ছোঁয়ানোর পেলবতায় আর কখনও টেনিস কোর্টে ফেদেরারের ট্রেডমার্ক ব্যাকহ্যান্ড শট দেখতে না পাওয়ার অতৃপ্তির কাছে এসবের স্থান কোথায়!

খেলা শেষ হওয়ার পর শুরু হয় ফেদেরারের বিদায়ী সাক্ষাৎকার। সেখানে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ে ‘ফেড-এক্স’ বললেন, তার মোটেও খারাপ লাগছে না! তিনি অনেক সুখী। ফেদেরারের শিশুর মতো কান্না নাকি আনন্দাশ্রু! যখন এই কিংবদন্তিদের মিলনমেলাই হয়ে গেছে ইতিহাস, রাফায়েল নাদালও বেশিরভাগ সময়ই মুখ ঢেকে রেখেছিলেন হাতের তালুর আড়ালে। তাকানো যাচ্ছিল না নোভাক জোকোভিচের দিকেও; সবাই-ই যে জানে, এ দেখাই শেষ দেখা! টেনিসের ‘বিগ ফোর’র আরেক সদস্য অ্যান্ডি মারেও ছিলেন সেখানে।

ফেদেরার তার সাক্ষাৎকারে বলেন, এই পরাজয়কে কোনোভাবে আমরা সামলে নেবো। এটা চমৎকার একটা দিন। দলের সদস্যদের বলেছি, আমি খুশি। মোটেও খারাপ লাগছে না। এখানে খেলে দারুণ লেগেছে। আরও একবার জুতোর ফিতে বাঁধাও উপভোগ করেছি। আসলে, আজকের সবই ছিল শেষবারের মতো।

কিছুটা কম নার্ভাস রাখার জন্য আশেপাশের সবাই চেষ্টা করেছে, এমনটা জানিয়ে ফেদেরার ধন্যবাদ দেন নাদাল এবং গ্যালারিতে উপস্থিত সকলকে। সুইস কিংবদন্তি বলেন, এরচেয়ে বেশি খুশি হওয়া যেত না। বিশেষ করে রাফার (নাদাল) সাথে এক দলে খেলা এবং কিংবদন্তিদের পাশে পাওয়া সত্যিই অনন্য।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে জুটি বেধে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল, এমন প্রশ্নে ফেদেরার বলেন, এক কথায় দুর্দান্ত। এরকম সময়ে একা থাকতে চাইনি। এই সাক্ষাৎকারের জন্য যখন ডাকা হলো, তখনই কেবল এক মুহূর্তের জন্য নিজেকে একা মনে হয়েছে। সবসময়ই মনে হয়েছে, হৃদয়ের গহীনে আমি একজন টিম প্লেয়ার। আর সেটা সিঙ্গেলস ম্যাচে টের পাওয়া কঠিন। নাদাল, জোকোভিচ, সিসিপাস, ক্যাস্পার রুড ইউরোপ টিমের কয়েকজন সদস্য। তাদেরকে পেয়ে মনে হচ্ছে, এটা একটা উদযাপনের উপলক্ষ্য। শেষটা এমন হোক, সেটাই চেয়েছিলাম।

৪১ বছর বয়সী রজার ফেদেরারের টেনিস ক্যারিয়ার ছিল সোনায় মোড়ানো। স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবা, সমর্থকদের সাথে টেনিস সতীর্থদের ধন্যবাদ জানান ফেড এক্সপ্রেস। এ সময় বেঞ্চে বসে বারবার চোখ মুছতে দেখা যায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েল নাদালকে। তিনিও যে জানেন, এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর!

অন্যদিকে, কড়ির মতন সাদা মুখ আর, দুইখানা হিমশীতল হাতে মাইক্রোফোন আঁকড়ে ফেদেরার ভাঙা গলায়ই বললেন, পুরো যাত্রা এরচেয়ে সুন্দর হতে পারতো না। এতটা পথ পেরিয়ে, সম্ভব হলে আবারও সবকিছুর পুনরাবৃত্তি ঘটাতাম! দারুণ আনন্দময় সময় কাটিয়েছি। এতজন মানুষকে আমার নাম ধরে উল্লাস করতে দেখেছি যে, আর কিছুই চাওয়ার নেই। অসাধারণ, অবিশ্বাস্য এক রাত এটা। সবাইকে ধন্যবাদ, আমি কৃতজ্ঞ।

এসএইচ-১১/২৪/২২ (স্পোর্টস ডেস্ক)