করোনা নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার ১০ কারণ

করোনা নিয়ে

করোনাকে মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ ফলে এই ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ থাকতেই পারে৷ তবে আতঙ্কিত সম্ভবত না হলেও চলবে, অন্তত ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামকে তাই বলেছেন নাভারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইগ্নাসিও লোপেজ গনি৷ খবর ডয়চে ভেলের।

করোনা ভাইরাস সম্পর্কে আমরা জানি

প্রথম এইডস রোগী ধরা পড়েছিল ১৯৮১ সালের জুন মাসে৷ তবে, সেই রোগের কারণ যে এইচআইভি ভাইরাস সেটা বুঝতে দুই বছরের বেশি সময় লেগেছিল৷ আর মানবদেহে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রথম ঘটনাটি ঘটে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর, চীনে৷ আর সেই ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে ভাইরাসটি শনাক্ত সম্ভব হয়৷ শুধু তাই নয়, প্রথম সংক্রমণের দশদিনের মাথায় ভাইরাসটির ধরন, উৎপত্তিসহ প্রায় সব তথ্য জানা সম্ভব হয়৷

ভাইরাসটি শনাক্তের উপায় জানি আমরা

১৩ জানুয়ারি থেকে ভাইরাসটি শনাক্তের জন্য প্রয়োজনীয় টেস্ট সহজলভ্য হয়৷

চীনে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে

চীনে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কড়াকড়ি এবং বিচ্ছিন্ন রাখার নীতি কাজ করেছে৷ দেশটিতে প্রতিদিনই নতুন সংক্রমণের হার কমছে৷ বিশ্বের অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে যেটা পরিষ্কার তা হচ্ছে ভাইরাসটি ছড়ালে তা নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকছে৷ ফলে সেটির সংক্রমণের পরিধি সীমিত রাখা সহজ৷

আশি শতাংশ সংক্রমণই হালকা ধরনের

৮১ শতাংশক্ষেত্রেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ টের পাওয়া যায়না বা খুব হালকা কিছু লক্ষণ টের পাওয়া যায়৷ তবে, ১৪ শতাংশ ক্ষেত্রে সংক্রমণের লক্ষণগুলো প্রবলভাবে ফুটে ওঠে এবং পাঁচ শতাংশক্ষেত্রে সেটি খুবই জটিল আকার বা প্রাণঘাতি হতে পারে৷ তবে, ভাইরাসটিতে মৃত্যুর সঠিক হার এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ এখন পর্যন্ত মৃত্যুর যে হারের কথা শোনা যাচ্ছে, প্রকৃত হার তারচেয়ে কম হতে পারে৷

মানুষ সুস্থ হয়

এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে মূলত সনাক্তকৃত করোনা ভাইরাস রোগী এবং করোনা সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা থাকে৷ এসব সংখ্যা পর্যালোচনা করলে দেয়া যাচ্ছে আক্রান্ত যত মানুষ মারা যাচ্ছেন তারচেয়ে ১৩ গুণ বেশি মানুষ সুস্থ হচ্ছেন৷ আর আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যার মধ্যকার আনুপাতিক হার ক্রমশ বাড়ছে৷

শিশুদের হালকা সংক্রমণ

এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র তিন শতাংশের বয়স বিশ বছরের নীচে৷ আর ৪০ বছরের নীচে বয়সিদের মধ্যে মৃত্যুর হার মাত্র শুন্য দশমিক দুই শতাংশ৷ শিশুদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণের লক্ষণগুলো এতই হালকা হতে পারে যে তা হয়ত অনেকের নজরেই পড়বে না৷

সহজেই নিষ্কৃয় করা যায় এই ভাইরাস

এলকোহলযুক্ত জীবানুনাশক ব্যবহার করে মাত্র একমিনিটেই সার্ফেসে থাকা করোনা ভাইরাস নিষ্কৃয় করা যায়৷ পাশাপাশি সাবান এবং পানি ব্যবহার করে কিছুক্ষণ পরপর হাত ধুয়ে করোনা ভাইরাস থেকে অনেকটাই নিরাপদে থাকা যায়৷

বিশ্বব্যাপী তৎপর বিজ্ঞানীরা

করোনা ভাইরাস ছড়ানোর একমাসের মধ্যেই বিশ্বের নানা দেশে অবস্থানরত বিজ্ঞানী, গবেষকরা এই বিষয়ে শতাধিক নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন৷ আরো অনেক নিবন্ধ রিভিউয়ের অপেক্ষায় রয়েছে৷ অতীতে এধরনের মহামারী ছড়ানোর পর সাধারণত সেটা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য পেতে আরো অনেক বেশি সময় লাগতো৷

ভ্যাকসিনের প্রটোটাইপ প্রস্তুত

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন তৈরির জন্য অন্তত আটটি প্রকল্প কাজ করছে৷ অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই ভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম ভ্যাকসিনের একটি প্রোটোটাইপও তৈরি করে ফেলেছে৷ এধরনের প্রোটোটাইপ শীঘ্রই মানবদেহে পরীক্ষা করা হবে৷

এন্টিভাইরালও পরীক্ষা করা হচ্ছে

ভ্যাকসিন দীর্ঘমেয়াদে ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে৷ কিন্তু এই মুহূর্তে যারা আক্রান্ত তাদের চিকিৎসা প্রদান জরুরী৷ করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় ব্যবহারের উপযোগী হতে পারে এমন আশিটির বেশি এন্টিভাইরালের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে৷ লেখক: নাভারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞানী ইগ্নাসিও লোপেজ গনি।

আরএম-০৪/১৪/০৩ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)